বোমা হামলার পর নাতাঞ্জ পারমাণবিক স্থাপনায় বড় গর্ত, স্যাটেলাইট চিত্র প্রকাশ

আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) জানিয়েছে, রবিবার মার্কিন হামলার পর ইরানের নাতাঞ্জ পারমাণবিক স্থাপনার স্যাটেলাইট ছবিতে কমপক্ষে একটি বড় গর্ত দেখা গেছে। এটি বাঙ্কার ধ্বংসকারী বোমার আঘাতের ইঙ্গিত দেয়। খবর আলজাজিরার।
এপির বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, প্ল্যানেট ল্যাবস পিবিসি ও ম্যাক্সার টেকনোলজিস কর্তৃক তোলা ছবিতে নাতাঞ্জ পারমাণবিক স্থাপনায় প্রায় ৫ মিটার (১৬ ফুট) একটি গর্ত দেখা গেছে। গর্তটি সাইটের ভূগর্ভস্থ অংশের ঠিক উপরে অবস্থিত, যার মধ্যে সেন্ট্রিফিউজ হল রয়েছে। ইরান এখনো নাতাঞ্জ পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন হামলার ক্ষয়ক্ষতির মূল্যায়ন করেনি। এর আগে, ইসরায়েলের হামলায় মাটির উপরে একটি সেন্ট্রিফিউজ হল, সেইসাথে পারমাণবিক স্থাপনাটির সব বিদ্যুৎ সরঞ্জাম ধ্বংস হওয়ার খবর জানা গিয়েছিল। এপি বলছে, ইসরায়েলি হামলায় সম্ভবত নাতাঞ্জ পারমাণবিক স্থাপনার বৈদ্যুতিক সরবরাহ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
ইরানের ফোরদো পারমাণবিক স্থাপনার স্যাটেলাইট ছবি বিশ্লেষণ করে এপি জানিয়েছে, মার্কিন হামলার পর ফোরদো পারমাণবিক স্থাপনার অন্তত তিনটি স্থানে বড় গর্ত দেখা গেছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, ইরানের সব পারমাণবিক স্থাপনা মার্কিন হামলায় ব্যাপকভাবে ধ্বংস হয়েছে। তিনি বলেন, “মার্কিন বোমা একবারে ভূগর্ভস্থ স্থাপনায় আঘাত হেনেছে।”
এদিকে ইরান বলছে, মার্কিন হামলার আগেই তারা পারমাণবিক উপাদান সরিয়ে ফেলতে সক্ষম হয়েছে।
ইরানের পররাষ্ট মন্ত্রণালায় পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন হামলাকে আন্তর্জাতিক আইনের ‘গুরুতর ও নজিরবিহীন লঙ্ঘন’ বলে অভিযোগ করেছে। পাশাপাশি এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তেহরানের পূর্ণ অধিকার রয়েছে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
ইসরায়েলের ওপর ‘বিরতিহীন’ হামলা চলছে: আইআরজিসি প্রধান
ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) প্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ পাকপুর বলেছেন, জায়নিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে যে প্রতিশোধমূলক হামলা চালাচ্ছে, তাতে কোনো বিরতি নেই। খবর তাসনিম নিউজের।
রবিবার (২২ জুন) আইআরজিসি কমান্ডারদের সঙ্গে এক বৈঠকে মেজর জেনারেল পাকপুর আরো বলেন, “আমরা একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে আছি।”
তিনি বলেন, “আইআরজিসি এরোস্পেস ফোর্স ইউনিটগুলো ইসরায়েলি সরকারের বিরুদ্ধে নিরবচ্ছিন্নভাবে অভিযান পরিচালনা করছে।”ইসরায়েলি আগ্রাসনের পর ইরানি জনগণের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সংহতির প্রশংসাও করেন পাকপুর।
তাসনিম নিউজ জানিয়েছে, ইসরায়েলি সরকার ১৩ জুন ইরানের বিরুদ্ধে বিনা উস্কানিতে আগ্রাসনের যুদ্ধ শুরু করে। তারা ইরানের পারমাণবিক, সামরিক এবং আবাসিক স্থাপনাগুলোতে বিমান হামলা চালিয়েছে, যার ফলে ৪০০ জনেরও বেশি ইরানি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে শীর্ষ সামরিক কমান্ডার, পারমাণবিক বিজ্ঞানী এবং সাধারণ নাগরিকরা রয়েছেন।
ইরানের সামরিক বাহিনী এর পরপরই পাল্টা আক্রমণ শুরু করে। অপারেশন ‘ট্রু প্রমিজ ৩’-এর অংশ হিসেবে রবিবার পর্যন্ত ইসরায়েলে ২০টি প্রতিশোধমূলক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে।
ইরানের ওপর মার্কিন হামলার বিষয়ে রাশিয়ার অবস্থান কী?
সোমবার ক্রেমলিন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। বিশ্লেষকদের মতে, ইরান ট্রাম্পকে একটি আপস করার প্রস্তাব দিতে পারে এবং পুতিনকে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে চায়। খবর আলজাজিরার।
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন হামলার বিষয়ে ক্রেমলিন এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি, তবে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন এর আগে বলেছিলেন, রাশিয়া সামরিকভাবে এই সংঘাতে জড়িত হবে না, কারণ রাশিয়া ইউক্রেনে নিজস্ব সামরিক অভিযান পরিচালনা করছে। এছাড়াও, পুতিনের মতে, এই সংঘাতের কোনো সামরিক সমাধান নেই। রাশিয়া বহু বছর ধরে ইরানকে সমর্থন করে আসছে। অন্যদিকে রাশিয়া ইসরায়েল ইস্যুতেও খুব সতর্ক, কারণ দেড় লাখেরও বেশি রুশ-ভাষী মানুষ ইসরায়েলে বসবাস করে। পুতিন এমনকি ইসরায়েলকে প্রায় রুশ-ভাষী দেশ বলেও অভিহিত করে থাকেন।
এদিকে, রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান নিরাপত্তা পরিষদের ডেপুটি চেয়ারম্যান দিমিত্রি মেদভেদেভ বলেছেন, ইরানের ওপর হামলা চালিয়ে আমেরিকানরা খুব বেশি কিছু অর্জন করতে পারেনি। তিনি আরো বলেছেন, শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মার্কিন ক্ষমতায় আসা ট্রাম্প এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেকে এক নতুন যুদ্ধের মুখে ফেলেছেন।
ইরানে অ্যাম্বুলেন্সে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৩
মধ্য ইরানে একটি অ্যাম্বুলেন্সে ইসরায়েলি ড্রোনের হামলায় কমপক্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা আইএসএনএ’র বরাত দিয়ে সোমবার (২৩ জুন) সকালে এ তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
মধ্য ইসফাহান প্রদেশের নাজাফাবাদ কাউন্টির গভর্নর হামিদরেজা মোহাম্মদি ফেসহারাকির বরাতে আইএসএনএ জানিয়েছে, অ্যাম্বুলেন্সে একজন রোগীকে অন্য হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছিল। ড্রোন হামলায় অ্যাম্বুলেন্সটি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ফেসহারাকি জানান, অ্যাম্বুলেন্সে থাকা চালক, রোগী ও রোগীর সঙ্গে থাকা স্বজন নিহত হয়েছেন। ড্রোন হামলার পর অ্যাম্বুলেন্সটির চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আরেকটি গাড়ির সঙ্গে ধাক্কা খায়।
আলজাজিরার তেহরান প্রতিনিধি তোহিদ আসাদি জানিয়েছেন, গত দুই ঘণ্টা ধরে ইরানের রাজধানী তেহরানের আকাশে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। তেহরানের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত পারচিন শহরেও ইসরায়েলি হামলার খবর পাওয়া গেছে।ইরানের কারজ, শিরাজ, তাবরিজ সহ অন্যান্য শহরেও বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী জানিয়েছে, তাদের বিমানবাহিনী ইরানের পূর্বাঞ্চল ও তেহরানে নতুন হামলা সম্পন্ন করেছে। সর্বশেষ হামলায় ইরানি সামরিক স্থাপনা লক্ষ্যবস্তু করার দাবি করেছে ইসরায়েল।