সোমবার , ২৩ জুন ২০২৫
Monday , 23 June 2025
২৬ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৬

প্রকাশিত: ১৫:১৩, ২১ জুন ২০২৫

সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশের নামে জমা বেড়েছে

সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশের নামে জমা বেড়েছে

২০২৪ সাল শেষে সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশের নামে জমা থাকা অর্থের পরিমাণ বেড়েছে। যদিও সুইস ব্যাংকে ভারতের থাকা অর্থও আগের বছরের চেয়ে কমেছে। ভারতের নামে ২০২৩ সালে ছিল (পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাদে) ১০৩ কোটি ফ্রাঁ। ২০২৪ সালে যার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৫০ কোটি ফ্রাঁ। অন্যদিকে পাকিস্তানের কাছে দায় কমেছে। পাকিস্তানের কাছে ২০২৪ সাল শেষে সুইস ব্যাংকগুলোর দায় ২৭ কোটি ফ্রাঁ। আগের বছর যা ছিল ২৯ কোটি ফ্রাঁ। তবে শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের কাছে সুইস ব্যাংকগুলোর দায় বেড়েছে।

সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক (এসএনবি) বিশ্বের সব দেশের সঙ্গে ২০২৪ সাল শেষে তাদের দেশের ব্যাংকগুলোর লেনদেন স্থিতির পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। বার্ষিক ব্যাংকিং পরিসংখ্যান নামে এই তথ্যগুচ্ছের মধ্যে বাংলাদেশের পরিসংখ্যান রয়েছে।

সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে দায়ের মধ্যে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর পাওনা, আমনাতকারীদের পাওনা এবং পুঁজিবাজারে বাংলাদেশের নামে বিনিয়োগের অর্থ রয়েছে। এর মধ্যে ৯৫ শতাংশের বেশি বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর পাওনা। এই অর্থ বাণিজ্যকেন্দ্রিক অর্থ বলে এর আগে বিভিন্ন সময়ে ব্যাখ্যা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সাল শেষে সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে বাংলাদেশের নামে পাওনা রয়েছে ৫৯ কোটি ৮২ লাখ সুইস ফ্রাঁ। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ৮ হাজার ৯৭২ কোটি টাকা (প্রতি ফ্রাঁ ১৫০ টাকা ধরে) । ২০২৩ সাল শেষে যার পরিমাণ মাত্র ছিল ১৭৭১৩ মিলিয়ন ফ্রাঁ। ২০২২ সাল শেষে ব্যাংকগুলোর পাওনা ছিল মাত্র ১ কোটি ৯৩ লাখ ফ্রাঁ।

গত বছর শেষে বাংলাদেশের ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের নামে গ্রাহক আমানত রয়েছে ১ কোটি ২৬ লাখ ফ্রাঁ, যা প্রায় ১৯০ কোটি টাকা। ২০২৩ সালে যা ছিল প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ ফ্রাঁ বা ২১০ কোটি টাকা। ব্যাংক এবং আমানতকারী গ্রাহক মিলিয়ে গত বছর বাংলাদেশের পাওনা (পুঁজিবাজার বাদে) ৫৮ কোটি ৯৫ লাখ ফ্রাঁ, যা এখনকার বিনিময় হার অনুযায়ী ৮ হাজার ৮৪৩ কোটি টাকার সমপরিমাণ। আগের বছর ছিল মাত্র ১ কোটি ৭৭ লাখ ডলার।

এদিকে সম্পদ ব্যবস্থাপকের মাধ্যমে বিভিন্ন শেয়ার বা সিকিউরিটিজে ২০২৪ সালে বাংলাদেশিদের বিনিয়োগের পরিমাণ ৮৬ লাখ ফ্রাঁ বা প্রায় ১৩০ কোটি টাকার সমপরিমাণ। আগের বছর ছিল ৮৭ লাখ ফ্রাঁ। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ যোগ করলে বাংলাদেশের নামে ওই সময় পর্যন্ত জমা থাকা মোট অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫৯ কোটি ৮১ লাখ ৬৩ হাজার ফ্রাঁ। যা আগের বছরের চেয়ে প্রায় ২৩ গুণ বেশি।

সুইস ব্যাংকে থাকা অর্থের একটি অংশ পাচার হয়ে থাকে বলে ধারণা করা হয়। তবে পাচার সম্পর্কে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায় না। এমনকি গ্রাহক আমানত হিসাবে কার কত অর্থ আছে তাও জানা যায় না। সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক গোপনীয়তার স্বার্থে সমস্ত ডেটা সমন্বিতভাবে প্রকাশ করে। আলাদাভাবে কোনো গ্রাহক বা ব্যাংকের তথ্য এ প্রতিবেদনে নেই।

বাংলাদেশের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট বা বিএফআইইউ সুইজারল্যান্ডের এফআইইউর সঙ্গে কয়েক দফা যোগাযোগও করেছিল। কিন্তু ব্যক্তির তালিকাসংবলিত কোনো তথ্য তারা দেয়নি। সুইজারল্যান্ডের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, অবৈধভাবে কেউ অর্থ নিয়ে গেছে এমন প্রমাণ সরবরাহ করলে তারা তথ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করতে পারে।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের কোনো নাগরিক বা প্রতিষ্ঠান যদি নিজের বদলে অন্য দেশের নামে অর্থ গচ্ছিত রেখে থাকে তাহলে তা সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশের নামে থাকা পরিসংখ্যানের মধ্যে আসেনি। একইভাবে সুইস ব্যাংকে গচ্ছিত রাখা মূল্যবান শিল্পকর্ম, স্বর্ণ বা দুর্লভ সামগ্রীর আর্থিক মূল্যমান হিসাব করে এখানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। অনেক দেশের নাগরিকই মূল্যবান সামগ্রী সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকের ভল্টে রেখে থাকেন।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়