প্রায় দুই দশক ধরে সরাসরি নির্বাচনী মাঠে অনুপস্থিত বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি অংশ নিতে পারেন তিন আসনে। এই খবরেই যেন নতুন করে চাঙা হয়ে উঠেছে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন, বিশেষ করে উত্তরবঙ্গের রাজনৈতিক কেন্দ্রবিন্দু বগুড়া। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলীয় সূত্র নিশ্চিত করেছে, খালেদা জিয়াকে এবার বগুড়া, ফেনী ও দিনাজপুর- এই তিনটি আসনে প্রার্থী করার সম্ভাবনা বেশি। এর মধ্যে বগুড়া-৬ অথবা ৭ আসন থেকে তার নির্বাচনে অংশগ্রহণ অনেকটাই নিশ্চিত। বগুড়া-৭ আসনটি (গাবতলী-শাহজাহানপুর) শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জন্মভূমি হওয়ায় এটি বরাবরই বিএনপির কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। বগুড়া দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির শক্ত ঘাঁটি হিসেবেই পরিচিত। ১৯৯১ থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে একাধিকবার এখান থেকে খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন এবং প্রতিবারই জয়ী হয়েছেন। ফলে বিএনপির রাজনৈতিক দিকনির্দেশনা ও শক্তি পুনর্গঠনে বগুড়া থেকে খালেদা জিয়ার অংশগ্রহণ দল ও সমর্থকদের মধ্যে ভরসা ও আশার আলো জাগিয়েছে। বিএনপির এক নেতা বলেন, বগুড়া আমাদের জন্য শুধু একটি আসন নয়, এটি আমাদের রাজনীতির প্রতীক। খালেদা জিয়া এখান থেকেই গণমানুষের বার্তা দিতে চান। এতে দলের ভেতরে যে বিভক্তি শুরু হয়েছিল, সেটিও অনেকটা বন্ধ হবে। দলীয় উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বেগম খালেদা জিয়া ফেনী-১, বগুড়া-৬ অথবা ৭ এবং দিনাজপুর জেলার একটি আসন থেকে নির্বাচন করতে পারেন। এরই মধ্যে সম্ভাব্য মনোনয়নের তালিকা তৈরির কাজ চলছে। দলীয় নেতারা জানিয়েছেন, বেগম জিয়ার মতো শুধু ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও একাধিক আসনে নির্বাচন করার অনুমতি পাবেন। ২০০৮ সালের পর ২০১৮ সালের নির্বাচনে তিনটি আসনে প্রার্থী হলেও কথিত দুর্নীতির মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ায় খালেদা জিয়ার প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছিল। তবে ২০২৪ সালে শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে থাকা সব মামলা আদালতের রায়ে খারিজ হয়ে যায়। সুপ্রিম কোর্ট তাকে দুটি মামলায় খালাস দেওয়ায় তার নির্বাচনে অংশগ্রহণে আর কোনো আইনি বাধা নেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বগুড়া জেলা বিএনপির এক সিনিয়র নেতা বলেন, ‘ম্যাডাম জিয়া এখন দেশে ফিরেছেন, শারীরিকভাবে আগের চেয়ে ভালো আছেন। তিনি মনোবল হারাননি। আমরা আশাবাদী, তিনি নির্বাচনে অংশ নেবেন এবং আবারও আমাদের নেতৃত্ব দেবেন। বগুড়া জেলা বিএনপির নেতাদের মতে, খালেদা জিয়ার নির্বাচনে অংশগ্রহণ শুধু দলের কর্মীদের নয়, সাধারণ ভোটারদের মধ্যেও বড় ধরনের সাড়া ফেলবে। দলের একজন সাবেক সংসদ সদস্য বলেন, বেগম জিয়ার প্রার্থিতা মানেই মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনার প্রতীক। বগুড়া থেকে তার অংশগ্রহণ আমাদের আন্দোলনকে শক্তিশালী করবে। ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে পাঁচটি আসনে প্রার্থী হয়ে সবগুলোতেই জয়ী হন বেগম খালেদা জিয়া। ২০১৮ সালে চেয়েও আইনি জটিলতায় লড়তে পারেননি। এবার তার সরাসরি অংশগ্রহণ শুধু নির্বাচন নয়, একটি নতুন রাজনৈতিক সময়েরও বার্তা দিচ্ছে।