করোনার চেয়ে ডেঙ্গুতে বেশি রোগী, বাড়ছে উদ্বেগ

রাজধানীর ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কোভিড-১৯ হাসপাতালে গত শুক্রবার করোনা টেস্ট করান ৪৫ জন। অন্যদিকে ১০০ জন করেন ডেঙ্গু টেস্ট। হাসপাতালটিতে বর্তমানে ভর্তি কোভিড-১৯ রোগী ১৭ জনের বিপরীতে ডেঙ্গু রোগী ২৮ জন। এমন চিত্র শুধু ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কোভিড-১৯ হাসপাতালের নয়, বরং সারাদেশের হাসপাতালগুলোর প্রতিফলন, যা নির্দেশ করছে চলতি বছর করোনার চেয়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেক বেশি।

মহাখালীর তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী মোহনা (১০) কয়েকদিন ধরে জ্বর ও শরীর ব্যথায় ভুগছিলেন। তার মা তাকে ডেঙ্গু টেস্ট করাতে নিয়ে এসেছিলেন এই হাসপাতালে। ডেঙ্গু নেগেটিভ আসায় তিনি স্বস্তি প্রকাশ করে বলেন, "টেনশন ছিল, ডেঙ্গু হলো কি না। টেস্ট করে নিশ্চিত হলাম যে, হয়নি। আলহামদুলিল্লাহ।" একইভাবে নাখালপাড়ার মিজানুর রহমান তার মা জাহানারা (৬০) ও মেয়ে মাইশাকে (৩) নিয়ে এসেছেন জ্বর ও সর্দি-কাশির জন্য করোনা বা ডেঙ্গু টেস্ট করাতে। সকাল সকাল হাসপাতালে প্রায় ২০-২২ জন রোগী ডাক্তার দেখানোর অপেক্ষায় ছিলেন, যাদের বেশিরভাগই ডেঙ্গু সন্দেহভাজন।

এ বছর ১ জানুয়ারি থেকে ২১ জুন পর্যন্ত সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৭ হাজার ৪২৯ জন ছাড়িয়েছে, যার মধ্যে ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে করোনা শনাক্ত হয়েছে মাত্র ৩৯৭ জনের দেহে এবং মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। শুধু গত ২৪ ঘণ্টায় (২১ জুন) ডেঙ্গু আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে ৩৫২ জন, করোনা শনাক্ত হয়েছে মাত্র ৪ জন। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, জুলাই মাসে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।

ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বে-নজির আহমেদ জোর দিয়ে বলেছেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধই সবচেয়ে কার্যকর উপায়। এডিস মশা যেন জন্মাতে না পারে, সেজন্য ঘর-বাড়ি ও আশপাশে কোথাও জমে থাকা পানি সরিয়ে ফেলতে হবে। ফ্রিজের নিচে, এসির নিচে, ফুলের টব, ছাদ, বাথরুমের কমোড, পরিত্যক্ত পাত্র, টায়ার বা প্লাস্টিকের কাপে জমা পানি তিন দিনের বেশি রাখা যাবে না। বাচ্চাদের ফুল হাতা কাপড় পরানো, দিনে ও রাতে মশারি ব্যবহার করা এবং মশার কামড় থেকে বাঁচার ব্যবস্থা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

জ্বর, সর্দি, গলা ব্যথা বা মাথা ব্যথা দেখা দিলেই দেরি না করে ডেঙ্গু ও করোনা টেস্ট করানোর পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য কোনো ওষুধ না খেয়ে প্রচুর পানি, ডাবের পানি, ওরস্যালাইন, ফলের রস খাওয়ার কথা বলেছেন তারা। বমি, পাতলা পায়খানা, খেতে না পারা বা অন্য কোনো জটিল রোগ থাকলে, বিশেষ করে বয়স্ক, শিশু ও নারীদের অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। ঢাকার উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ডে বিনামূল্যে ডেঙ্গু টেস্টের সুবিধা রয়েছে।

ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কোভিড-১৯ হাসপাতালের পরিচালক কর্নেল তানভীর আহমেদ জানান, বর্তমানে ৩০০ বেড সক্রিয় আছে এবং জনবল পেলে এক হাজার বেডে উন্নীত করার সুযোগ রয়েছে। ঢাকায় ১৮টি সরকারি ও ৫৯টি বেসরকারি হাসপাতাল/ক্লিনিকে করোনা ও ডেঙ্গু টেস্ট করা হচ্ছে।