সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে ,শিল্পী দর্শকের চোখের জলে বার্মিংহামে সম

সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে ,শিল্পী দর্শকের চোখের জলে বার্মিংহামে সম্প্রীতি কনসার্ট
জুয়েল রাজ-
১৬ ফেব্রুয়ারী রবিবার বার্মিংহামে অনুষ্ঠিত হয়েছে তৃতীয় সম্প্রীতি কনসার্ট ইউকে ২০২৫। সম্প্রীতি কনসার্ট ইউকে ও পূর্বানাট'র যৌথ এউ আয়োজনে অংশ নিয়েছিলেন যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহরের বিভিন্ন সংগঠন ও শতাধিক শিল্পীবৃন্দ।
সম্প্রীতি কনসার্টের মুখপাত্র ঊর্মি মাজহার ও রাজীব জেবতিকের সঞ্চালনায় শিল্পীরা একে একে গেয়ে শোনান দেশের গান, বাউল গান,লালনগীতি ,স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের গান । যা আমাদের যুগে যুগে প্রেরণা দিয়ে আসছে । ছিল নৃত্য ,আবৃত্তি ও আয়না আর্টসের পরিবেশনায় গীতি নাট্য।
অনুষ্ঠানের শুরুতে মঞ্চে আয়োজকদের পক্ষ থেকে পাঠ করা হয় ঘোষণাপত্র । সেখানে বলা হয় ,আমরা ঘোষণা করছি যে সম্প্রীতি কনসার্ট ইউকে একটি অরাজনৈতিক, অলাভজনক আন্দোলন। বাংলাদেশের হাজার বছরের লালিত ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে সমুন্নত রাখতে আমরা একে অপরের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সম্মিলিতভাবে একই মঞ্চে কাজ করে যাব। যে চেতনা ও বিশ্বাস থেকে ১৯৭১ সালে ৩০ লক্ষ শহীদ ও ৩ লক্ষ মা- বোনের জীবন-মান বিসর্জন এবং লাখো মুক্তিযোদ্ধার জীবনপণ সংগ্রামের মধ্যদিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জিত হয়েছে আমরা বাংলাদেশের সর্বত্র সেই সব অসাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শের বাস্তবায়ন দেখতে চাই। আমরা আমাদের কর্ম, চিন্তা ও চেতনায় মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতার প্রতি পরম আস্থা এবং মানব সত্তার মর্যাদা ও মূল্যবোধের প্রতি অবিচল শ্রদ্ধাবোধ ধারণ ও প্রতিপালন করব। সময় সময় বাংলাদেশে ভিন্ন ধর্ম, বর্ণ, ধারা ও প্রকৃতির মানুষের উপর যেসব অত্যাচার সংগঠিত হয়েছে আমরা তার পূণরাবৃত্তির অবসান চাই।
বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া সনাতন ধর্মাবলম্বী থেকে শুরু করে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয়ে আক্রমন ও ক্ষতিসাধন সহ যত সব নিপীড়ন হয়েছে ওগুলোর নিন্দা জানিয়ে প্রত্যেক ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত, বিচার ও অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
আমরা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে বিশ্বাসী জনগন ঘোষনা করছি যে আমাদের প্রতিবেশী দেশসমুহ সহ সর্বত্র সাম্প্রদায়িক সম্পর্ককে অক্ষুন্ন রাখতে এবং যে কোন সহায়ক ভুমিকা পালন করতে সর্বদা সচেষ্ট থাকব।
আমরা বৃটিশ-বাংলাদেশী জনগন আরো ঘোষনা করছি যে যুক্তরাজ্যে বসবাসরত নানা ধর্মের, নানা বর্ণের, নানা সংস্কৃতির, নানা জাতির মানুষের মধ্যে বিদ্যমান বহু- সাংস্কৃতিক সমাজ ব্যবস্থায় আমরা একান্তভাবে বিশ্বাসী এবং এই ঐতিহ্যকে অটুট রাখতে তথা বিভিন্ন নৃগোষ্ঠির মানুষের মধ্যে প্রীতি ও সুসম্পর্ক গঠনে সব সময় দৃষ্টি রাখব।
আমরা আরো ঘোষনা করছি যে আমাদের এই সাংস্কৃতিক আন্দোলন অব্যাহত ভাবে চলমান থাকবে। পরস্পরের হাতে হাত ধরে সব ধরণের উগ্রবাদের বিরুদ্ধে আমরা সম্প্রীতির জয়গান গাইব।
প্রথমাবারের মত বার্মিংহামে পূর্বানাটের আয়োজনে শতাধিক শিল্পীর একই মঞ্চে অংশগ্রহণ এক নতুন ইতিহাস বলে জানিয়েছেন আয়োজকবৃন্দ। এর আগে একই মঞ্চে এত শিল্পীর অংশ নেয়ার ঘটনা ঘটেনি।
পূর্বানাট'র পক্ষে মুরাদ খান বলেন, এই ধরণের আয়োজনের আয়োজক হিসাবে পূর্বানাট একটি ইতিহাসের অংশ হয়ে গেছে। এই সম্প্রীতি শুধু বাংলাদেশের ধর্মীয় সম্প্রীতি নয় পুরো বিশ্বজুড়েই অস্থিরতা চলছে । বিভাজন নয় আমরা একটি মানবিক বিশ্ব দেখতে চাই। এই ধরনের আয়োজন আমাদের সেই শক্তি দেয়। মানুষের মাঝে সুন্দর বার্তা পৌঁছে দিবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
একে পর এক জাগরণী গান ও দেশের গান গাইছিলেন শিল্পীরা দর্শক সারি ছিল মোহাবিষ্ট। সদ্যপ্রয়াত শিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায় কে স্মরণ করে গৌরী চৌধুরী গেয়ে উঠেন আমি বাংলায় গান গাই,
আমি বাংলায় ভালোবাসি ,আমি বাংলাকে ভালোবাসি, আমি তারি হাত ধরে সারা পৃথিবীর মানুষের কাছে আসি গাইতে গিয়ে নিজেই কেঁদে ফেলেন,মঞ্চের অন্যান্য সহ শিল্পীদের চোখ ও তখন অশ্রুসিক্ত । দর্শক সারীতে পিন পতন নীরবতা একে একে সবাই তখন চোখের কোণ মুছছিলেন।
সম্প্রীতি কনসার্ট ইউকের মুখপাত্র , উর্মি মাজহার বলেন, সম্প্রীতি কনসার্ট একটি সাংস্কৃতিক আন্দোলন । আমরা রাজনীতি বা রাষ্ট্রকে নিয়ন্ত্রণ করিনা।
আমরা এই যে মানুষগুলো একত্রিত হয়েছি এইটা একটি শক্তি ,আমরা মানুষের বোধকে বদলাতে পারি। চিন্তাকে বদলাতে পারি ,মানুষের মাঝে অসাম্প্রদায়িক বিশ্বাসের বীজ ছড়াতে পারি। আর সেই চেষ্টাই করে চলছি ।
উল্লেখ্য সম্প্রীতি কনসার্ট ইউকে যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত শিল্পী, সাহিত্যিক, কলাকুশলী, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক তথা সমগ্র জনগণের একটি সম্মিলিত, সৌহার্দ্যপূর্ণ, সামাজিক, সাংস্কৃতিক উদ্যোগ। যার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ২০২১ সালের ১২ ডিসেম্বর।
অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু মুসা হাসান, বীর মুক্তিযোদ্ধা দেওয়ান গৌছ সুলতান, এশিয়ান এজ এর সম্পাদক সাংবাদিক সৈয়দ বদরুল আহসান, ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ।
দলীয় সঙ্গীতে পর্বের পরিচালনায় ছিলেন গৌরী চৌধুরী ও সঞ্জয় দে। আয়না আর্টসের জেসমিন চৌধুরীর রচনা ও নির্দেশনায় মঞ্চস্থ হয় নাটক । সেফিল্ডের গানের দলের সঙ্গীত পরিচালনায় ছিলেন লীনা পাল বার্মিংহামে ছিলেন রোজী সরকার। সম্প্রীতি কনসার্টের পক্ষে যোগ দিয়েছিলেন, সৈয়দ আনাস পাশা ,সৈয়দ এনাম ইসলাম , প্রশান্ত পুরকায়স্থ বিএমই, অপু চৌধুরী , স্মৃতি আজাদ, জুয়েল রাজ, মোস্তফা কামাল, নজরুল ইসলাম অকিব সহ অর্ধশতাধীক শিল্পী।