সোমবার , ২৩ জুন ২০২৫
Monday , 23 June 2025
২৬ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৬

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৬:১৬, ২২ মে ২০২৫

আপডেট: ১৬:১৭, ২২ মে ২০২৫

জুলাইয়ে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সেনাবাহিনীর সাক্ষাৎকার ছাড়াই জাতিসংঘের মানবাধিকার রিপোর্ট

জুলাইয়ে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সেনাবাহিনীর সাক্ষাৎকার ছাড়াই জাতিসংঘের মানবাধিকার রিপোর্ট
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান গত ২১ মে সেনা সদস্যদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় (দরবার) দেশের বর্তমান পরিস্থিতি, সেনাবাহিনীর ভূমিকা এবং জাতিসংঘের প্রতিবেদনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কঠোর বার্তা দিয়েছেন। এই দরবারে তিনি দেশের নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা এবং সেনাবাহিনীর দায়িত্ব পালন নিয়ে স্পষ্ট অবস্থান তুলে ধরেন।

জেনারেল ওয়াকার উল্লেখ করেন, দেশি-বিদেশি কিছু স্বার্থান্বেষী মহল পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে। তিনি এই মহলের কার্যক্রমের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণের ইঙ্গিত দেন এবং সেনাবাহিনীকে এ বিষয়ে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন।

জুলাই-আগস্ট ২০২৪-এর গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের (ওএইচসেএইচআর) প্রতিবেদন প্রসঙ্গে সেনাপ্রধান জানান, এই প্রতিবেদন তৈরির সময় সেনাবাহিনীর কোনো বক্তব্য গ্রহণ করা হয়নি। তিনি বলেন, জাতিসংঘ সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার তাদের সেই সুযোগ দেয়নি। এ বিষয়ে জাতিসংঘের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন যদিও এটাকে “ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং রিপোর্ট” বলছে, কিন্তু বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই রিপোর্টকে ভিত্তি করে বক্তব্য দিচ্ছেন এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারের রেফারেন্স হিসাবে ধরা হচ্ছে এই প্রতিবেদনকে, যদিও এটা কোন তদন্ত প্রতিবেদন না।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওএইচসেএইচআর-এর তদন্ত দল ২৩০টিরও বেশি গোপনীয় এবং একান্ত সাক্ষাৎকার পরিচালনা করেছে, যার মধ্যে শিকার, সাক্ষী, ছাত্র ও অন্যান্য আন্দোলনের নেতা, মানবাধিকার কর্মী, চিকিৎসা পেশাজীবী এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক ব্যক্তিদের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের সাক্ষাৎকারও অন্তর্ভুক্ত ছিল। এছাড়া, ৩৬টি অতিরিক্ত সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছিল সিনিয়র সরকারি, নিরাপত্তা খাত এবং রাজনৈতিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে। তদন্ত দলটি ঢাকা, চট্টগ্রাম, রংপুরসহ বিভিন্ন প্রতিবাদ-উত্তপ্ত স্থানে গিয়েছিল এবং সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছিল।
কিন্তু সেনাপ্রধানের ভাষ্যমতে জুলাই এর ১৮ তারিখ থেকে সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব সেনাবাহিনীর হাতে থাকার পরেও মানবাধিকার কমিশন কোন সেনা সদস্যের সাক্ষাৎকার নেয় নাই। মানবাধিকার কমিশন তাদেরই সাক্ষাৎকার নিয়েছিল, যাদের ড ইউনুসের সরকার এবং সমন্বয়করা ঠিক করে দিয়েছিল। অর্থাৎ এটা একটা পুর্বপরিকল্পনা অনুযায়ি একপাক্ষিক সাক্ষাতকারের উপর ভিত্তি করে দেয়া ফরমায়েশি প্রতিবেদন।

জেনারেল ওয়াকার জোর দিয়ে বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশ ও জনগণের ক্ষতি হয় এমন কোনো কাজ করবে না এবং কাউকেই এ ধরনের কাজ করতে দেবে না। তিনি সেনাবাহিনীকে জনগণের আস্থার প্রতীক হিসেবে উল্লেখ করে দেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা রক্ষায় সেনাবাহিনীর পেশাদারিত্ব ও নিষ্ঠার কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।

সেনাপ্রধান উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে সেনা সদস্যরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় মোতায়েন থাকায় দেশের সার্বিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি জানান, একটি নির্বাচিত সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর যত দ্রুত সম্ভব সেনাবাহিনীকে সেনানিবাসে ফিরিয়ে নেওয়া হবে। তিনি সতর্ক করে বলেন, এটি সম্ভব না হলে বিশ্ব ও প্রতিবেশী অঞ্চলের উদ্ভূত পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে।

এই মতবিনিময় সভায় সেনাপ্রধানের বক্তব্য দেশের বর্তমান রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে তাৎপর্যপূর্ণ বলে বিবেচিত হচ্ছে। তিনি সেনাবাহিনীর পেশাদারিত্ব, শৃঙ্খলা এবং জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতার ওপর গুরুত্বারোপ করে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের জন্য কাজ করার আহ্বান জানান।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়