মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের মাধ্যমে স্বদেশে ফিরতে চান রোহিঙ্গারা

কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের মাধ্যমে স্বদেশে ফিরতে চান এবং নিজেদের বসতভিটা পেলে ঝুপড়ি ঘরে আর থাকতে চাই না।
শুক্রবার (২০ জুন) দুপুরের দিকে উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পে আয়োজিত বিশ্ব শরণার্থী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে এ কথা তুলে ধরেন রোহিঙ্গারা।
জানা গেছে, ২০১৭ সালে মিয়ানমারের রাখাইনে দেশটির জান্তা বাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর দমন-পীড়ন ও নির্যাতন করলে তারা প্রাণ বাঁচাতে লাখ লাখ রোহিঙ্গা উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রয় গ্রহণ করে। বর্তমানে সাড়ে ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বসবাস করছে।
রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের পরে মিয়ানমার ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে দুই দফা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে আলোচনা হলেও এখনো একজন রোহিঙ্গাও স্বদেশে ফিরতে পারেনি।
তবে রাখাইনে বিগত দেড় বছরে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে দেশটির বিদ্রোহী সংগঠন আরাকান আর্মি রাখাইনের এক-তৃতীয়াংশ সীমান্ত ও শহর দখলে নেন।
আরাকান আর্মি রাখাইন দখলে নিলে তারাও রোহিঙ্গাদের ওপর দমন-পীড়ন ও নির্যাতন শুরু করলে নতুন করে আরও ১ লাখ ১৮ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে। তবে এখনো রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের দরজা খোলেনি।
রোহিঙ্গা নেতা ইউনূস আরমান বলেন, ২০১৭ সালে মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা জনগণের ওপর দেশটির জান্তা বাহিনী গণহত্যা দমন-পীড়ন ও নির্যাতনের পর রোহিঙ্গারা স্বদেশের ভিটেমাটি ফেলে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে রোহিঙ্গারা উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রয় হিসাবে আছে। কিন্তু ক্যাম্পের ঝুপড়ি ঘরে আমরা আর কতদিন থাকবো। ঝুপড়ি ঘর ছেড়ে নিজ জন্মভূমিতে মর্যাদাপূর্ণ ও নিরাপদ প্রত্যাবাসনের মাধ্যমে ফিরতে চাই।
কুতুপালং ক্যাম্পের রোহিঙ্গাদের চেয়ারম্যান মাজেদ আব্দুল্লাহ বলেন, আমরা সবসময় প্রস্তুত স্বদেশে ফিরে যেতে। কিন্তু বর্তমানে রাখাইনে আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে। তবুও আমরা স্বদেশে ফিরে যাবো যদি সেখানে আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে
বিশ্ব শরণার্থী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে শিশু থেকে শুরু করে বৃষ্টির মধ্যে শতশত রোহিঙ্গা, মানবাধিকার এবং রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নিরাপদ ও দ্রুত প্রত্যাবাসনের জোর দাবি তোলা হয়।
১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক (অতিরিক্ত ডিআইজি) সিরাজ আমীন বলেন, বিশ্ব শরণার্থী দিবস উপলক্ষে কুতুপালং ক্যাম্পে রোহিঙ্গা সমাবেশ করেন। এ সময় ক্যাম্পে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সমাবেশে চলাকালীন কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। ক্যাম্পে এপিবিএন পুলিশের মোবাইল টিমের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারিসহ সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়।
কক্সবাজারের শরণার্থী ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মিজানুর রহমান বলেন, ক্যাম্পের মধ্যে রোহিঙ্গারা শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করেছেন। সমাবেশকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর ছিল। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।