৩৮ দিন ধরে অচল নগর ভবন, নাগরিক সেবাবঞ্চনায় এক কোটি মানুষ

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান কার্যালয় ‘নগর ভবন’সহ সব আঞ্চলিক কার্যালয়ে টানা ৩৮ দিন ধরে তালা ঝুলছে। মেয়র পদে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে শপথ পড়ানোর দাবিতে তার সমর্থকরা এ তালা লাগিয়ে রেখেছেন। ফলে জন্মনিবন্ধন, ট্রেড লাইসেন্স, হোল্ডিং ট্যাক্সসহ অন্তত ২৮ ধরনের নাগরিক সেবা বন্ধ হয়ে গেছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন প্রায় এক কোটি নাগরিক।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নগর ভবনের প্রধান ফটক থেকে শুরু করে ভিতরের প্রতিটি দপ্তর তালাবদ্ধ। নাগরিকরা প্রতিদিন ফিরে যাচ্ছেন প্রয়োজনীয় সেবা না পেয়ে। একই চিত্র ধানমন্ডি, যাত্রাবাড়ী, বংশাল, লালবাগ, সায়েদাবাদ, খিলগাঁওসহ দশটি অঞ্চলের কার্যালয়েও।
সেবা না পেয়ে ধানমন্ডির বাসিন্দা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করাতে জন্মসনদ লাগছে। বারবার নগর ভবনে গিয়ে খালি হাতে ফিরছি।”
বংশালে ব্যবসা শুরু করতে চাওয়া ইমতিয়াজ আহমেদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “তিনবার গিয়েছি ট্রেড লাইসেন্সের জন্য, প্রতিবারই তালা ঝুলে থাকতে দেখেছি।”
ডিএসসিসির জনসংযোগ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নগর ভবন থেকে দেওয়া হয় জন্মসনদ, মৃত্যু সনদ, ট্রেড লাইসেন্স, ওয়ারিশ সনদসহ ২৮ ধরনের সেবা। পাশাপাশি পরিচ্ছন্নতা, মশক নিধন, সড়ক ও ড্রেন সংস্কার, সড়কবাতি মেরামত, কমিউনিটি সেন্টার বুকিং ও কবরস্থান ব্যবস্থাপনার কাজও এখান থেকেই নিয়ন্ত্রিত হয়। বর্তমানে সব কার্যক্রম থমকে গেছে।
এদিকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও মশক নিধন কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়েছে। নগর ভবন ও আঞ্চলিক অফিস বন্ধ থাকায় ওষুধ ও সরঞ্জাম বের করাও সম্ভব হচ্ছে না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এডিস মশার প্রাদুর্ভাব বাড়ছে, ডেঙ্গুর ঝুঁকি দিন দিন বাড়ছে।
নগর ভবনে প্রবেশ করতে না পেরে ডিএসসিসির প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়া এখন ওয়াসা ভবনে বসে দাপ্তরিক কার্যক্রম চালাচ্ছেন। প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. জিল্লুর রহমান কাজ করছেন সরকারি কর্মচারী হাসপাতালের একটি ছোট কক্ষ থেকে।
তিনি বলেন, “বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সেবা বন্ধ রয়েছে। তবে আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। আমাদের কয়েকজন কর্মচারী বিএনপি নেতার সঙ্গে বৈঠকও করেছেন, তবে আমাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।”
নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, “নগর ভবন দখল করে দাবি আদায়ের চেষ্টা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান অবরোধ করে নাগরিকদের দুর্ভোগে ফেলে লাভ নেই, বরং সরকারকেই দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।”
ডিএসসিসির ৭৫টি ওয়ার্ডে প্রতিদিন অন্তত ৫–৭ হাজার মানুষ সেবা নিতে আসেন। কিন্তু দীর্ঘদিন সেবা বন্ধ থাকায় পরিস্থিতি নাজুক হয়ে পড়েছে।
সাধারণ মানুষ বলছে, “মেয়র হোক বা না হোক, আমাদের সেবা যেন বন্ধ না হয়। এর দায় কে নেবে?”
এই সংকটময় অবস্থার অবসান ও নাগরিক দুর্ভোগ নিরসনে সরকার দ্রুত হস্তক্ষেপ নেবে—এমন প্রত্যাশা নাগরিকদের।