ইসরায়েল ছোট আয়তনের রাষ্ট্র, কিন্তু বৈশ্বিক প্রভাবশালী শক্তি

মধ্যপ্রাচ্যের ছোট্ট একটি দেশ ইসরায়েল—আয়তনে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের চেয়েও ছোট, কিন্তু সামরিক শক্তি, প্রযুক্তি উন্নয়ন ও কূটনৈতিক তৎপরতায় এটি আজ বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী রাষ্ট্র। যদিও এখনো অনেক দেশ, বিশেষ করে মুসলিমপ্রধান রাষ্ট্রগুলো ইসরায়েলকে আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। বাংলাদেশও তার মধ্যে একটি।
ইসরায়েলের জন্ম ১৯৪৮ সালের ১৪ মে। তুর্কি অটোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর ফিলিস্তিন এলাকা ব্রিটিশ শাসনের অধীনে যায়। এ সময় ইউরোপে নিপীড়িত ইহুদিরা ‘জায়নবাদ’ নামে একটি আন্দোলনের মাধ্যমে নিজেদের জন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের দাবি তোলে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসিদের হাতে লাখ লাখ ইহুদির গণহত্যা—হলোকাস্টের পর এই দাবির পক্ষে বিশ্বমত গড়ে ওঠে। এরপর জাতিসংঘের প্রস্তাব অনুযায়ী ফিলিস্তিন অঞ্চলকে বিভক্ত করে ইহুদিদের জন্য ইসরায়েল নামে একটি রাষ্ট্র গঠিত হয়। শুরু থেকেই আরব রাষ্ট্রগুলো এর বিরোধিতা করে।
ওয়ার্ল্ডোমিটারের ২০২২ সালের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের জনসংখ্যা প্রায় ৯৫ লাখ। এর মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ ইহুদি হলেও, মুসলিম, খ্রিষ্টান ও দ্রুজ সম্প্রদায়ের লোকও উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় বসবাস করে। মুসলমানদের বেশিরভাগই ফিলিস্তিনি আরব বংশোদ্ভূত, যারা নাগরিকত্ব পেয়েও অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যে বাস করেন।
ইসরায়েলের পশ্চিমে ভূমধ্যসাগর, উত্তরে লেবানন, উত্তর-পূর্বে সিরিয়া, পূর্বে জর্ডান, দক্ষিণ-পশ্চিমে মিশর এবং গাজা ও পশ্চিম তীর ঘিরে রয়েছে বিরোধপূর্ণ ভূখণ্ড। এর পূর্ব সীমান্ত ঘেঁষে রয়েছে ‘ডেড সি’ বা মৃত সাগর। দেশটি মাত্র ৪২৯ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং প্রস্থে মাত্র ১১ কিলোমিটার। আয়তনের মধ্যে রয়েছে বিতর্কিত অঞ্চল যেমন গোলান মালভূমি, পূর্ব জেরুজালেম ও পশ্চিম তীর।
ইসরায়েল জেরুজালেমকে তাদের ‘অভিন্ন ও অখণ্ড’ রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করলেও অধিকাংশ দেশ এখনো তেল আবিবকে কূটনৈতিক কেন্দ্র হিসেবে মেনে চলে। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও কিছু মিত্র দেশ ইতিমধ্যে তাদের দূতাবাস জেরুজালেমে সরিয়ে নিয়েছে। ফিলিস্তিনিরাও পূর্ব জেরুজালেমকে নিজেদের ভবিষ্যৎ রাজধানী হিসেবে দাবি করে।
তেল আবিব ইসরায়েলের অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত প্রাণকেন্দ্র। হাইফা বন্দরনগরী হিসেবে, আর নাজারেথ ও বিয়ার শেভা ধর্মীয় ও প্রশাসনিক কারণে গুরুত্বপূর্ণ। ইসরায়েল আজ বৈশ্বিক প্রযুক্তি কোম্পানির হাবে পরিণত হয়েছে, যেখানে সাইবার সিকিউরিটি, মেডিকেল টেকনোলজি ও কৃষি প্রযুক্তিতে দারুণ অগ্রগতি হয়েছে।
জাতিসংঘ এখনো ইসরায়েলকে পূর্ণস্বীকৃত রাষ্ট্র হিসেবে গ্রহণ করলেও, বিশ্বের প্রায় ৩০টির বেশি দেশ এখনো ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয়নি।
সাম্প্রতিক সময়ে ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনা, ফিলিস্তিন সংকট এবং জেরুজালেম ইস্যু নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে। সব মিলিয়ে, আয়তনে ছোট হলেও বৈশ্বিক রাজনীতিতে ইসরায়েল এক বড় নাম।