জুলাই অভ্যুত্থানের পরও রাজনীতিতে বিভাজন বাড়ছে: মির্জা ফখরুল
বিএনপির এর মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান দেশকে ঐক্যের পথে নেওয়ার এক বিরাট সুযোগ সৃষ্টি করেছিল, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আজও রাজনৈতিক বিভাজন ও ভেদরেখা আরও গভীর হচ্ছে।
সোমবার (২০ অক্টোবর) রাজধানীর ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইডিইবি) মিলনায়তনে আয়োজিত এক আলোচনা ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানের আয়োজন করে মাসিক বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমা, যেখানে এ বছরের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
ফখরুল বলেন, আমরা হতাশ হচ্ছি। এত বড় একটা গণঅভ্যুত্থানের পর দেশের পুনর্গঠন ও সৌন্দর্য ফেরানোর সুযোগ এসেছিল। কিন্তু চারপাশে তাকালে দেখি; রাজনীতিতে ঐক্যের চেয়ে বিভাজনই বাড়ছে। অনেকে দূরে সরে যাচ্ছেন, একধরনের বিচ্ছিন্নতার বাতাস বইছে। এটা অত্যন্ত বেদনাদায়ক।
তিনি বলেন, রাজনীতি তখনই সুন্দর ও অর্থবহ হয় যখন তাতে সততা, আদর্শ ও জনগণের স্বপ্ন পূরণের আন্তরিকতা থাকে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, তিনি তরুণ প্রজন্মকে হতাশ করতে চান না; বরং তাদের সামনে আশার নতুন ভোর দেখতে চান।
স্বপ্ন ছাড়া কোনো জাতি এগোতে পারে না। তোমাদের স্বপ্ন দেখতে হবে, আর সেই স্বপ্ন পূরণের সক্ষমতা অর্জন করতে হবে, বলেন ফখরুল।
তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি কবিতার উদ্ধৃতি দিয়ে তরুণদের উদ্দেশে বলেন, যেভাবে কবি অন্ধকার রাতেও পাখিকে উড়তে বলেছেন, আমিও বলি, অন্ধকার যতই ঘন হোক, তোমরা থেমে যেও না; ভবিষ্যৎ তোমাদেরই ডাকছে।
তরুণদের গ্লোবাল প্রতিযোগিতার উপযোগী করে তুলতে ব্যর্থতার জন্য দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে দায়ী করেন ফখরুল।
আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার মান খুবই নিচে। রাজনীতিক আর আমলাতন্ত্র, দুই পক্ষই এর জন্য দায়ী, বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে প্রযুক্তিগত ও কারিগরি শিক্ষায় যথাযথ গুরুত্ব না দেওয়ার কারণে লাখ লাখ তরুণ উচ্চশিক্ষা নিয়েও বেকার থেকে যাচ্ছে।
ছাত্ররা বিএ বা এমএ করছে কিন্তু চাকরি পাচ্ছে না। অথচ যদি তারা বিদ্যুৎ, সিভিল বা অন্য কোনো কারিগরি বিষয়ে ডিপ্লোমা করত, তাহলে তাদের চাকরি নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হতো না, বলেন ফখরুল।
তিনি বলেন, শিক্ষকরা রাস্তায় আন্দোলন করছেন বেতনের জন্য, এটা অত্যন্ত লজ্জার। যদি আমরা শিক্ষা কাঠামোকে নতুনভাবে সাজাতে পারতাম, তাহলে উচ্চশিক্ষা সীমিত রেখে অধিকাংশ শিক্ষার্থীকে কারিগরি প্রশিক্ষণে যুক্ত করা যেত। তাতে দেশও লাভবান হতো।
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, কারিগরি শিক্ষা ও বৃত্তিমূলক প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিনিয়োগ বাড়ানো এখন সময়ের দাবি।
বর্তমান সময়কে ‘রূপান্তরের যুগ’ আখ্যা দিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এখন প্রজন্মান্তরের পার্থক্য খুব স্পষ্ট। আজকের তরুণরা, বিশেষ করে জেনারেশন জেড একটি মোবাইল ফোন থেকেই গোটা পৃথিবী দেখতে পারে। তারা আমাদের চেয়েও অনেক কিছু জানে। এখন আমাদের দায়িত্ব তাদের সেই জ্ঞান ও ক্ষমতাকে সৃষ্টিশীল কাজে ব্যবহার করতে সাহায্য করা।
মির্জা ফখরুল বলেন, রাজনীতি যদি স্বপ্ন ও নৈতিকতা হারায়, তবে তা কেবল ধ্বংস ডেকে আনে। একজন রাজনীতিক জাতিকে উচ্চতায়ও নিতে পারেন, আবার পতনের দিকেও টেনে নিতে পারেন। রাজনীতিতে সৌন্দর্য ও সততা না আনলে তা স্বার্থকেন্দ্রিক হয়ে পড়ে, আর এমন রাজনীতি কেবল ঘৃণাই অর্জন করে।





































