একীভূত হতে যাচ্ছে ৫ ইসলামী ব্যাংক, বিনিয়োগকারীদের ভাগ্যে কী আসছে?

বাংলাদেশের শরিয়াহভিত্তিক পাঁচটি বেসরকারি ব্যাংককে একীভূত করে একটি বৃহৎ ইসলামি ব্যাংক গঠনের উদ্যোগ প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে প্রক্রিয়ার বড় অংশ সম্পন্ন করেছে। এখন সরকারের মূলধন সহায়তা পেলেই আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করবে নতুন ইসলামি ব্যাংকটি।
একীভূতকরণের আওতায় থাকা ব্যাংকগুলো হলো— ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক এবং এক্সিম ব্যাংক। পরিকল্পনা অনুযায়ী, নতুন ব্যাংকটি ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের (এসএমই) অর্থায়নে বিশেষায়িত একটি শরিয়াহভিত্তিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা হবে। পাঁচ ব্যাংকের সব আমানত, সম্পদ ও দায়ভার নতুন প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তর হবে।
গ্রাহক ও চাকরিজীবীদের প্রভাব
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন, ব্যাংক একীভূত হলেও গ্রাহকদের লেনদেনে কোনো সমস্যা হবে না। তারা স্বয়ংক্রিয়ভাবে নতুন ব্যাংকের গ্রাহক হবেন। শীর্ষ পর্যায়ের বাইরে অন্য কর্মীরা অন্তত তিন বছর বহাল থাকবেন।
শেয়ার বণ্টনের নিয়ম
সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য শেয়ার বণ্টন হবে শেয়ারের বাজারমূল্য ও অভিহিত মূল্যের গড় নির্ধারণ করে। উদাহরণস্বরূপ, কারও কাছে এক্সিম ব্যাংকের ১০০ শেয়ার থাকলে যার অভিহিত মূল্য ১০ টাকা ও বাজারমূল্য ২ টাকা— মোট বাজারমূল্য দাঁড়ায় ২০০ টাকা। অন্যদিকে কারও কাছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ২০০ শেয়ার থাকলে (বাজারমূল্য ৩ টাকা) মোট বাজারমূল্য হয় ৬০০ টাকা। নতুন ব্যাংকে শেয়ার বণ্টন হবে বাজারমূল্যের অনুপাতে— অর্থাৎ এই ক্ষেত্রে ১:৩ অনুপাতে।
প্রাথমিকভাবে লভ্যাংশের সম্ভাবনা নেই
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভাষ্য, একীভূত হওয়া ব্যাংকগুলো আর্থিকভাবে দুর্বল হওয়ায় প্রাথমিক পর্যায়ে লভ্যাংশ দেওয়ার সুযোগ থাকবে না। বিনিয়োগকারীরা নতুন ব্যাংকের শেয়ার পাবেন, তবে তা থেকে তাৎক্ষণিক মুনাফা প্রত্যাশা করা উচিত নয়। ব্যাংক লাভজনক হলে পরবর্তীতে লভ্যাংশ বিবেচনা করা হবে।
আমানতের নিরাপত্তা ও সরকারের ভূমিকা
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, “আমানতকারীদের কোনো ঝুঁকি নেই। সরকার প্রাথমিকভাবে মূলধন দেবে এবং পরবর্তীতে লাভসহ ফেরত নেবে। ভবিষ্যতে নতুন ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ দেশি বা বিদেশি বিনিয়োগকারীর হাতে দেওয়া হতে পারে।”
প্রক্রিয়ার অগ্রগতি
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, আইনগতভাবে ব্যাংক একীভূত করতে কোনো জটিলতা নেই। বিদ্যমান আইনের আওতায় আর্থিকভাবে দুর্বল ব্যাংকগুলো একীভূত করা সম্ভব। প্রাথমিকভাবে শরিয়াহভিত্তিক একই নীতিমালায় পরিচালিত পাঁচ ব্যাংককে একীভূত করে স্থিতিশীল ও শক্তিশালী ইসলামি ব্যাংক গঠনই মূল লক্ষ্য।
মালিকানা ও পটভূমি
একীভূত হতে যাওয়া পাঁচ ব্যাংকের মধ্যে এক্সিম ব্যাংকের মালিকানা আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম মজুমদারের। বাকি চার ব্যাংকের মালিক ছিল এস আলম গ্রুপ, যা ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘনিষ্ঠ। বিগত সরকারের সময়ে এসব ব্যাংক থেকে মালিকরা বিপুল অর্থ তুলে নেন, ফলে আর্থিক সংকটে পড়ে ব্যাংকগুলো। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এসব ব্যাংকে নতুন পর্ষদ দায়িত্ব নেয়। এক্সিম ছাড়া বাকি চার ব্যাংকে অন্তর্বর্তী সরকার স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেয়।
বিনিয়োগকারীদের জন্য পরামর্শ
কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তাদের মতে, একীভূত ব্যাংকের শেয়ার সংখ্যা কমলেও তার মূল্যমান বজায় থাকবে। বিনিয়োগকারীদের উচিত একে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ হিসেবে দেখা— প্রাথমিকভাবে লভ্যাংশ না এলেও ভবিষ্যতে ব্যাংক শক্তিশালী হলে ভালো রিটার্ন আসতে পারে।