রোববার , ১০ আগস্ট ২০২৫
Sunday , 10 August 2025
১৫ সফর ১৪৪৭

ডেস্ক নিউজ

প্রকাশিত: ২০:০৬, ৯ আগস্ট ২০২৫

ব্যবসায়ীদের আস্থা ফেরাতে আইনশৃঙ্খলার দৃশ্যমান উন্নতি জরুরি

ব্যবসায়ীদের আস্থা ফেরাতে আইনশৃঙ্খলার দৃশ্যমান উন্নতি জরুরি
ছবি: সংগৃহীত

অর্থনীতিকে স্বাভাবিক পথে ফেরাতে হলে ব্যবসায়ীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। এর জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে বিচারব্যবস্থা, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও আমলাতন্ত্রে দ্রুত কাঠামোগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার জরুরি। পাশাপাশি, ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা বজায় রেখে ঋণপ্রবাহ বাড়ানোতে গুরুত্ব দিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রির (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী (পারভেজ)।

তিনি বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দৃশ্যমানভাবে উন্নত করতে হবে, যাতে ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগের নিরাপত্তা অনুভব করেন।

 

অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর পূর্তিতে সাফল্য, চ্যালেঞ্জ ও ব্যর্থতা নিয়ে এক সাক্ষাৎকারে আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী এসব কথা বলেছেন।

 

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর গত এক বছরে দেশের অর্থনৈতিক সংস্কার বা প্রাপ্তি হিসেবে ব্যবসায়ী সমাজ আসলে কী পেল?

আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী: এ প্রশ্নের উত্তর হয়তো জনগণই ভালো বলতে পারবে। তবে আমাদের দৃষ্টিকোণ থেকে কিছু পর্যবেক্ষণ শেয়ার করতে পারি। ব্যাংকিং খাতে কিছুটা উন্নতি হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী ব্যালান্স অব পেমেন্টে উদ্বৃত্ত এসেছে, কারেন্ট অ্যাকাউন্টেও প্রায় এক বিলিয়ন ডলারের উদ্বৃত্ত রয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও স্থিতিশীল অবস্থায় আছে, যা ৩০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে।

ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা কিছুটা ফিরেছে, কিন্তু একইসঙ্গে একটি রক্ষণশীল নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুদের হার বাড়ানো হয়েছে, যার ফলে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি জুন মাসে মাত্র ৬ শতাংশে নেমে এসেছে এবং আগামী ছয় মাসের জন্যও লক্ষ্য ধরা হয়েছে মাত্র ৭.২ শতাংশ। এর মানে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক ধরে নিয়েছে, আপাতত বেসরকারি খাতে বড় ধরনের ঋণ প্রবৃদ্ধি প্রয়োজন নেই।

সংস্কার উদ্যোগগুলোর এই সীমিত প্রভাবের ফলে সামগ্রিক অর্থনীতি ও ব্যবসায়িক কার্যক্রমে কী প্রভাব পড়ছে?

আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী: বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়া মানে বিনিয়োগ বাড়ছে না। এর সঙ্গে কর্মসংস্থানও কমে যাচ্ছে, বরং কিছু ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে। শিল্প খাতের অনেক প্রতিষ্ঠান ধীরে ধীরে উৎপাদন ক্ষমতা হারাচ্ছে। এর পেছনে সুদের হার বৃদ্ধি, বাজারে চাহিদা কমে যাওয়া, মুদ্রাস্ফীতি, গ্যাস ও জ্বালানি সংকটসব মিলিয়ে একাধিক কারণ কাজ করছে। এর ফলে শিল্প খাতে অসুস্থ ঋণের পরিমাণও বেড়ে জুন পর্যন্ত প্রায় ৫ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছে, যা খুবই উদ্বেগজনক। এর প্রভাব আন্তর্জাতিক ক্রেডিট রেটিংয়ের ওপর পড়বে এবং বিদেশ থেকে এলসি খোলা বা তহবিল আনার ক্ষেত্রেও সমস্যা বাড়াবে।

ব্যবসায়ী সমাজ কি এসব সংস্কারের ফলে ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী হতে পারছে?

আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী: দুঃখজনকভাবে, না। নতুন বিনিয়োগ বা বিদ্যমান শিল্পের সম্প্রসারণদুটো ক্ষেত্রেই আশাবাদ দেখা যাচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলার উন্নতি হয়নি, বরং অনেক ক্ষেত্রে অবনতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যদিও নির্বাচনের সময় ঘোষণা করা হয়েছে কিন্তু রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনিশ্চিত। পরবর্তী সরকারের পরিকল্পনাএসব নিয়েই ধোঁয়াশা রয়েছে। ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, সরকার তাদের সঙ্গে নিয়মিত সংলাপ করছে না বা তাদের আস্থা অর্জনের মতো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।

 

আপনার মতে সংস্কার উদ্যোগগুলো কেন প্রত্যাশিত ফল দিচ্ছে না?

আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী: প্রথমত, বড় কোনো কাঠামোগত বা প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার হয়নি। সংস্কারের নামে অনেক সময়ক্ষেপণ হয়েছে, কিন্তু বাস্তবে ফলপ্রসূ কিছু আসেনি। ব্যবসায়ীরা মূলত বিচার ব্যবস্থা, আমলাতন্ত্র, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে সংস্কার দেখতে চায়, কিন্তু এসব খাতে দৃশ্যমান পরিবর্তন হয়নি। দ্বিতীয়ত, নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও স্থিতিশীলতার অভাব রয়েছে। তৃতীয়ত, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের প্রেসক্রিপশনের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা অনেক সময় দেশের বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে মেলে না, ফলে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি হয় না।

আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী: প্রথমত, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে হবে। দ্বিতীয়ত, কাঠামোগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবেবিশেষ করে বিচার ব্যবস্থা, এনবিআর এবং আমলাতান্ত্রিক কার্যপ্রণালিতে। তৃতীয়ত, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দৃশ্যমানভাবে উন্নত করতে হবে, যাতে ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগের নিরাপত্তা অনুভব করেন। চতুর্থত, ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা বজায় রাখার পাশাপাশি ঋণপ্রবাহ বাড়ানোর পথ খুঁজে বের করতে হবে, যাতে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়ে। পঞ্চমত, সরকারকে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নিয়মিত সংলাপে বসতে হবে এবং তাদের মতামত নীতি প্রণয়নে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়