মালদ্বীপে রেমিট্যান্সে শীর্ষে বাংলাদেশি শ্রমিকরা

মালদ্বীপ থেকে প্রবাসী আয় প্রেরণে বাংলাদেশিদের দাপট আরও একবার প্রমাণিত হলো। মালদ্বীপ মানি অথরিটি (এমএমএ) প্রকাশিত পেমেন্টস বুলেটিন–২০২৪ অনুযায়ী, গত বছর দেশটি থেকে মোট ১৪৩.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠানো হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৫৯ শতাংশ বেশি।
এর মধ্যে এককভাবে শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। ২০২৪ সালে মালদ্বীপ থেকে বাংলাদেশের প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন ১১২ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি, যা মোট রেমিট্যান্স প্রবাহের ৭২ শতাংশ। তুলনায় নেপাল পেয়েছে ৫ শতাংশ, ফিলিপাইন ও মিশর ৪ শতাংশ করে এবং ভারত মাত্র ২ শতাংশ।
ধারণা করা হয়, মালদ্বীপে বর্তমানে ৮০ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি বিভিন্ন খাতে কর্মরত আছেন। নির্মাণশিল্প, মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও গৃহকর্মের পাশাপাশি এখন তারা আতিথেয়তা, পর্যটন ও সেবাখাতেও বিস্তৃত। ফলে আয় বেড়ে রেমিট্যান্স প্রবাহ রেকর্ড স্তরে পৌঁছেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশি শ্রমিকের সংখ্যা বৃদ্ধি, মহামারির পর অর্থনীতির পুনরুদ্ধার, বৈধ চ্যানেলের ব্যবহার এবং মজুরি কাঠামোয় উন্নতি—সব মিলিয়ে এই প্রবৃদ্ধি এসেছে। তাদের মতে, ছোট একটি দেশ হয়েও মালদ্বীপ থেকে বাংলাদেশের রেমিট্যান্স আশ্চর্যজনকভাবে বেশি, যা প্রমাণ করে দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষুদ্র শ্রমবাজারেও বাংলাদেশের শ্রমিকরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
বাংলাদেশের জিডিপির প্রায় ৬–৭ শতাংশ আসে প্রবাসী আয় থেকে। মালদ্বীপ থেকে আসা রেমিট্যান্স শুধু বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে শক্তিশালী করছে না, বরং গ্রামীণ অর্থনীতিতে ভোগ ও বিনিয়োগ বাড়িয়ে দিচ্ছে।
অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করে দিয়েছেন, শ্রমিকদের দক্ষতা, বৈধ কাগজপত্র ও ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত না হলে এই প্রবৃদ্ধি দীর্ঘমেয়াদে টেকসই হবে না।
দক্ষ শ্রমিক রপ্তানি: নির্মাণশ্রমিক ছাড়াও হোটেল, পর্যটন ও প্রযুক্তিখাতে দক্ষ কর্মী পাঠাতে হবে।
প্রাতিষ্ঠানিক রেমিট্যান্স: হুন্ডির পরিবর্তে ব্যাংক ও এমএফএস ব্যবহারের প্রবণতা বাড়াতে হবে। এজন্য মালদ্বীপে সরকারি ব্যাংকের শাখা খোলার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
মালদ্বীপ বিএনপির সভাপতি খলিলুর রহমান বলেছেন, শ্রম চুক্তি সুদৃঢ় হলে প্রবাসী শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও কর্মপরিবেশ আরও উন্নত হবে। আর মালদ্বীপের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সিআইপি সোহেল রানা মন্তব্য করেন, “এটি কেবল অর্থনৈতিক সূচক নয়; বরং বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার যোগান, শ্রমবাজারে অবস্থান এবং প্রবাসীদের অবদানের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।”