বৃহস্পতিবার , ০৭ আগস্ট ২০২৫
Thursday , 07 August 2025
১২ সফর ১৪৪৭

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৭:২১, ৭ আগস্ট ২০২৫

স্বাস্থ্যখাতে অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরে ‘শৃঙ্খলার পথে অগ্রগতি’

স্বাস্থ্যখাতে অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরে ‘শৃঙ্খলার পথে অগ্রগতি’
ছবি: সংগৃহীত

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর অর্থনীতির পাশাপাশি অন্যতম চ্যালেঞ্জিং খাত ছিল স্বাস্থ্য। নানা সংকট, অনিয়ম ও জনবল ঘাটতির মধ্যেও গত এক বছরে এ খাতে দেখা গেছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ও কাঠামোগত অগ্রগতি।

২০২৪ সালের জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে আহত ও নিহতদের তালিকা প্রণয়ন ছিল সরকারের প্রথম বড় চ্যালেঞ্জ। আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন, জেলা পর্যায়ে যাচাই-বাছাই শেষে গেজেটভুক্ত করা হয়েছে ১২ হাজার ৪২ জন আহত ব্যক্তিকে। তাদের জন্য চালু হয়েছে স্বাস্থ্যকার্ড, যার মাধ্যমে তারা আজীবন বিনামূল্যে সরকারি চিকিৎসা সেবা পাবেন।

আহতদের পুনর্বাসনে ঢাকার ধামরাইয়ে নির্মিত হচ্ছে একটি পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্র। পক্ষাঘাতগ্রস্তদের জন্য রোবোটিক ফিজিওথেরাপি, মানসিক স্বাস্থ্যসেবা এবং বিদেশে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৭৮ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হয়েছে এবং ২৬ জন বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেশে এনে সেবা দেওয়া হয়েছে।

স্বাস্থ্যসেবা সচিব মো. সাইদুর রহমান বলেন, "আমরা বলছি না, সব করে ফেলেছি। তবে আমরা আন্তরিকভাবে কাজ করছি। আশা করি, সফল হবো।"

স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম বলেন, "যেখানে হাত দেই সেখানেই সমস্যা। তারপরও চাপে-ভবিষ্যৎচিন্তায় কাজ করে যাচ্ছি।"

স্বাস্থ্যখাতে স্বনির্ভরতা অর্জনে ওষুধ ও ভ্যাকসিন উৎপাদন প্রতিষ্ঠান ইডিসিএলের সক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে। বর্তমানে ইডিসিএল ১৫ শতাংশ ওষুধ উৎপাদন করলেও, নতুন প্রকল্পের মাধ্যমে তা ৮০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যে কাজ চলছে। গোপালগঞ্জের ভ্যাকসিন প্ল্যান্ট সরিয়ে মুন্সিগঞ্জে নতুন স্থাপনায় কাজ করছে সরকার।

চিকিৎসক ও নার্সদের বদলি ও পদায়নে চালু হয়েছে ডিজিটাল ব্যবস্থা। নার্সদের ক্ষেত্রে ৩,৫০০ পদায়ন ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে, চিকিৎসকদের ক্ষেত্রেও একই পদ্ধতি চালুর কাজ চলছে।

২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৩ হাজার চিকিৎসকের নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে, আরও প্রায় ৩,৫০০ জনের নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন। নার্স ও মিডওয়াইফের জন্য প্রায় ৯ হাজার নতুন পদ সৃষ্টির প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ে। পদোন্নতির ক্ষেত্রেও বড় অগ্রগতি দেখা গেছে—সহকারী অধ্যাপক পদে ২১৮ জন এবং প্রায় ৭ হাজার চিকিৎসক ‘সুপার নিউমারারি’ পদে পদোন্নতির প্রক্রিয়ায় রয়েছেন।

সরকারি হাসপাতালে দ্বিতীয় শিফটে চিকিৎসা সেবা চালু হয়েছে পরীক্ষামূলকভাবে। ঢাকায় জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকছে।

স্বাস্থ্যখাতে আইন ও নীতিমালাতেও চলছে সংস্কার। ‘মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন, ২০২৫’ প্রণয়ন প্রক্রিয়াধীন, যা কিডনি, বোনম্যারো ও ভবিষ্যতে লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট সহজ করবে।

এছাড়া, স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন ও বাংলাদেশ চিকিৎসা শিক্ষা অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল গঠনের মাধ্যমে শিক্ষা ও চিকিৎসার মান উন্নয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

স্বাস্থ্য অবকাঠামো উন্নয়নে চীন সরকারের অর্থায়নে রংপুরে ১ হাজার শয্যার এবং ঢাকার উত্তরা ও চট্টগ্রামে ৫০০-৭০০ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণ চলছে। পাশাপাশি গবেষণা ও নীতিনির্ধারণে সক্রিয় হয়েছে বিএমডিসি, বিএমআরসি ও নার্সিং কাউন্সিল।

সমালোচনার জায়গাও রয়েছে

যদিও সরকারের প্রচেষ্টা প্রশংসিত, তবুও সমালোচনার বিষয়ও রয়েছে। আহতদের তালিকায় স্বজনপ্রীতির অভিযোগ, সরকারি হাসপাতালে ওষুধের ঘাটতি, হয়রানি, দুর্বল নজরদারি ও গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবা অবহেলার বিষয়গুলো এখনো রয়ে গেছে। ট্রান্সপ্ল্যান্ট আইন বাস্তবায়নে ধীরগতি এবং ওষুধের গুণমান-মূল্য নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে।

তবুও গত এক বছরে স্বাস্থ্যখাতে গৃহীত নানা বাস্তবভিত্তিক উদ্যোগ দেশকে একটি কাঠামোগত রূপান্তরের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়