বৃহস্পতিবার , ০৭ আগস্ট ২০২৫
Thursday , 07 August 2025
১১ সফর ১৪৪৭

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৭:৩১, ৬ আগস্ট ২০২৫

জুলাই ঘোষণাপত্রের ফাঁকফোকর দেখছেন বিশ্লেষকরা

জুলাই ঘোষণাপত্রের ফাঁকফোকর দেখছেন বিশ্লেষকরা
ছবি: সংগৃহীত

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রকাশিত ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে নানা আলোচনা শুরু হয়েছে। তাঁদের দাবি, এই দলিলের মাধ্যমে মূলত বিএনপি ও নবগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আনুষ্ঠানিকভাবে এই ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। এতে জুলাই ২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থানকে রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

ঘোষণাপত্রে বলা হয়, দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রে গণতান্ত্রিক সরকার গঠনের পথ ব্যাহত হয়, যার সুযোগে ১/১১-এর ধারাবাহিকতায় দেশে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনের পথ সুগম হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মামুন আল মোস্তফা বলেন, “এই ঘোষণায় নতুন কিছু নেই। বরাবরের মতোই আওয়ামী বিরোধিতা রয়েছে। এক-এগারোর ঘটনাকে ‘ষড়যন্ত্রমূলক ব্যবস্থা’ বলা হয়েছে, যা মূলত বিএনপিকে সন্তুষ্ট করার জন্য বলা।”

তিনি আরও বলেন, “ঘোষণায় সংবিধান সংশোধনের কথা থাকলেও অন্তর্বর্তী সরকার সে ম্যান্ডেট রাখে না, এটাও তারা বুঝে ফেলেছে বলে মনে হচ্ছে।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও একই বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ বলেন, “বিএনপি ও এনসিপির প্রসঙ্গ ঘোষণা‌নায় জোরালোভাবে এলেও, ইসলামী দলসহ অন্যান্য অংশগ্রহণকারী গোষ্ঠীর কথা তেমনভাবে আসেনি। একটি অংশগ্রহণমূলক দলিল হিসেবে সব পক্ষের কথা থাকাই উচিত ছিল।”

অধ্যাপক সাব্বির মনে করেন, “ঘোষণাপত্র নির্মোহভাবে লেখা হয়নি। শেখ হাসিনার শাসনকে একনায়কতান্ত্রিক বলা হলেও, ৭৫-৯০ সময়কালের সামরিক শাসনের কথাও স্পষ্ট করে বলা হয়নি।”

অন্যদিকে অধ্যাপক মামুন বলেন, “জুলাই অভ্যুত্থানে যারা রাজপথে ছিলেন, তাদের অনেকে ছিলেন অরাজনৈতিক বা বিভিন্ন দলের সদস্য। এনসিপি পরবর্তীকালে গঠিত হয়েছে। কিন্তু ঘোষণায় এনসিপিকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।”

ঘোষণাপত্রের ২৪ ধারায় জুলাই আন্দোলনের শহীদদের ‘জাতীয় বীর’ ঘোষণা করে, তাদের পরিবার ও আন্দোলনকারীদের আইনি সুরক্ষার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে অধ্যাপক মামুন বলেন, “এটি মূলত প্রতীকী স্বীকৃতি। এতে বিরোধী শক্তিগুলোর মধ্যে এক ধরনের যৌথ রাজনৈতিক অবস্থান প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করা হয়েছে।”

তবে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, “বিদ্রোহকারীদের দায়মুক্তি দেওয়ার চিন্তা আন্তর্জাতিক মহলে নেতিবাচক বার্তা দিতে পারে, এবং ইতিহাস বলছে দায়মুক্তি টেকসই নয়।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষক সাইমন মহসীন মনে করেন, “এই ঘোষণায় কাঠামোগত বা আইনি সংস্কারের কোনো বাস্তব পরিকল্পনা নেই। এটি আবেগনির্ভর দলিল, যার মূল উদ্দেশ্য অভ্যুত্থানকারীদের সাংবিধানিক নিরাপত্তা দেওয়া।”

তিনি বলেন, “ঘোষণাপত্রে মুক্তিযুদ্ধের মর্যাদার সঙ্গে এই অভ্যুত্থানের তুলনা করা হয়েছে—যা বিতর্কিত। একইসঙ্গে, সরকার পরিবর্তনের পরবর্তী পর্যায়ে এই ঘোষণাপত্রকে সংবিধানের তফসিলে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব রাজনৈতিকভাবে বিতর্কিত।”

অধ্যাপক মামুন বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা এই প্রতিশ্রুতি দিতে পারেন না। এটি জনগণ ও ভবিষ্যতের নির্বাচিত রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাজ।”

রাজনীতির কাঙ্ক্ষিত সংস্কার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “কোনো ঘোষণাপত্র দিয়ে রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন সম্ভব নয়। তার জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক নেতাদের আচরণগত পরিবর্তন।”

সর্বশেষ

জনপ্রিয়