বাগেরহাটে বাগদা চাষে ভয়াবহ মড়ক, ক্ষতির মুখে হাজারো চাষি

দেশের সাদা সোনা খ্যাত বাগেরহাটে ভয়াবহ সংকটে পড়েছেন বাগদা চিংড়ি চাষিরা। চলতি মৌসুমে ভাইরাস, অস্বাভাবিক তাপমাত্রা ও টানা বৃষ্টির কারণে ঘেরে হঠাৎ করে চিংড়ি মরে যাচ্ছে আশঙ্কাজনক হারে। এতে উৎপাদন অর্ধেকে নেমে আসায় লোকসানের মুখে পড়েছেন হাজারো চাষি।
চাষিদের অভিযোগ, মানসম্মত পোনার সংকটের পাশাপাশি প্রতিকূল আবহাওয়া চিংড়ি চাষে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকেই ঘের খালি হয়ে যাওয়ায় ঋণ পরিশোধ নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন।
রামপালের চাকশ্রী বাজার এলাকার মৎস্য চাষি মো. শাহজাহান বলেন, “গত বছর এই সময়ে ঘের থেকে প্রতিদিন ৪০-৫০ কেজি চিংড়ি পেতাম। এখন পানিতে জাল ফেললে খালি উঠে আসে। লাখ টাকার পোনা ছেড়েছি, অথচ ঘেরে চিংড়ি নেই।”
একই এলাকার আরেক চাষি সেলিম হোসেন বলেন, “এখন যে অবস্থা, তাতে ঋণ শোধ করাই কঠিন হবে। আগামী মৌসুমে বাগদা চাষ করব কি না, তা নিয়েই দ্বিধায় আছি।”
চাষিদের সংকটের বিষয়ে জেলা চিংড়ি চাষি সমিতির সভাপতি ফকির তৌহিদুর রহমান সুমন বলেন, “বাগদা চিংড়ি মারা যাওয়ার সঠিক কারণ খুঁজে বের করতে চিংড়ি গবেষণা কেন্দ্রের সহায়তা চাইছি। বিজ্ঞানসম্মত রোগ নির্ণয় ছাড়া কার্যকর সমাধান সম্ভব নয়।”
এদিকে বাগেরহাট চিংড়ি গবেষণা কেন্দ্রের সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার ড. মো. আরিফুল ইসলাম জানান, ঘেরের পানি ও মাটির নমুনা পরীক্ষা করে রোগের কারণ নির্ণয় করা হচ্ছে। দ্রুত ফলাফল জানানো হবে, যাতে চাষিরা সঠিক ব্যবস্থা নিতে পারেন।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, “ভাইরাসের পাশাপাশি পানি স্বল্পতা, অস্বাভাবিক তাপমাত্রা ও লাগাতার বৃষ্টির কারণে নোনা পানির চিংড়ি মারা যাচ্ছে। চাষিদের ঘের প্রস্তুত, মানসম্মত পোনা ব্যবহার ও পানি ব্যবস্থাপনায় সতর্ক হতে হবে।”
জেলা মৎস্য অফিসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাগেরহাটে বর্তমানে ৫১ হাজার ১৫৯ হেক্টর জমিতে ৪৬ হাজার ৩১৩টি ঘেরে বাগদা চাষ হচ্ছে। গত অর্থবছরে এ জেলায় উৎপাদন হয়েছিল ২০ হাজার ৯৪০ মেট্রিক টন বাগদা চিংড়ি। তবে এবার উৎপাদন অর্ধেকে নেমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন চাষিরা।