শনিবার , ১৬ আগস্ট ২০২৫
Saturday , 16 August 2025
২০ সফর ১৪৪৭

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৪:১৬, ১৪ আগস্ট ২০২৫

একের পর এক অঘটন, আকাশপথে বিপদ বাড়ছে বিমানের

একের পর এক অঘটন, আকাশপথে বিপদ বাড়ছে বিমানের
ছবি: সংগৃহীত

রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের আকাশপথে নিরাপত্তা ও সেবা মান নিয়ে প্রশ্ন আরও জোরালো হচ্ছে। গত এক মাসে অন্তত ১৮টি উড়োজাহাজে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিয়েছে, যার ফলে একাধিক ফ্লাইট মাঝ আকাশ থেকে ফিরে এসেছে বা উড্ডয়নের আগেই বাতিল হয়েছে। এতে শিডিউল বিপর্যয় ও যাত্রীদের ভোগান্তি বেড়েছে।

এক মাসে রেকর্ড ত্রুটি

প্রতিটি ত্রুটির ঘটনাই মূলত আন্তর্জাতিক রুটে ঘটেছে। কোনো ফ্লাইট উড্ডয়নের পর ফেরত এসেছে, আবার কোনোটির ত্রুটি ধরা পড়েছে রানওয়েতে দাঁড়ানো অবস্থায়। এমনকি আকাশে উড়ন্ত অবস্থায় বিমানের চাকা খুলে মাটিতে পড়ার ঘটনাও ঘটেছে। ফলে বিমানের প্রতি আস্থা হারিয়ে অনেক যাত্রী অন্য এয়ারলাইন্স বেছে নিচ্ছেন, যা আর্থিক ক্ষতিও বাড়াচ্ছে।

বিমানের কর্মকর্তারা দাবি করেন, যেকোনো ত্রুটি ধরা পড়লে তাৎক্ষণিক হ্যাঙ্গারে নিয়ে মেরামত করা হয়। কিন্তু প্রায়ই দেখা যাচ্ছে, মেরামতের পরও নতুন ত্রুটি দেখা দিচ্ছে।

ত্রুটির মধ্যেই নতুন বোয়িং কেনার পরিকল্পনা

বর্তমানে বিমানের বহরে ২১টি উড়োজাহাজ রয়েছে, যার মধ্যে ১৬টি বোয়িং ও ৫টি ড্যাশ-৮। এর মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র থেকে নতুন ২৫টি বোয়িং কেনার চিন্তাভাবনা চলছে।

সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা

১২ আগস্ট ঢাকা-কুয়েত ও ঢাকা-চট্টগ্রাম-দুবাই রুটের দুটি বোয়িং ৭৮৭ ফ্লাইট ত্রুটির কারণে বাতিল হয়।

১১ আগস্ট কুয়েতগামী যাত্রীদের ফ্লাইট বাতিল করে পরদিনের জন্য সময় দেওয়া হয়, কিন্তু রাতযাপনের ব্যবস্থা নিয়ে অস্পষ্টতা ছিল।

একই দিনে চট্টগ্রামগামী একটি ড্যাশ-৮ ফ্লাইটে কেবিনের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় তা ঢাকায় ফেরত আসে।

১০ আগস্ট রোম থেকে ঢাকাগামী ফ্লাইট ফ্ল্যাপ ত্রুটিতে বাতিল হয়; ২৬২ যাত্রীকে হোটেলে রাখা হয়েছে।

এর আগে ৭ আগস্ট আবুধাবিগামী ফ্লাইটে একযোগে তিনটি টয়লেট অকেজো হয়ে পড়ায় তা ঢাকায় ফেরত আসে।

৩০ জুলাই শারজাহ ফ্লাইটের বিলম্বের কারণে ব্যাংকক ফ্লাইটও দেরি হয়।

২৯ জুলাই রোমে বিমানের ব্যাগেজ কনটেইনারে তেলাপোকা ও দুর্গন্ধ পাওয়া গেলে জীবাণুনাশক কার্যক্রমে ফ্লাইট চার ঘণ্টা বিলম্বিত হয়।

১৬ মে কক্সবাজার থেকে উড্ডয়নের সময় বিমানের এক পাশের চাকা খুলে পড়ে, তবে নিরাপদে ঢাকায় অবতরণ করে।

বিমান চলাচল বিশেষজ্ঞ ও সাবেক বোর্ড সদস্য কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, “ষড়যন্ত্র নয়, প্রতিটি ত্রুটিরই কারণ আছে। পুরোনো উড়োজাহাজে যান্ত্রিক সমস্যা হবেই। দক্ষ প্রকৌশল বিভাগ দিয়ে দ্রুত সমাধান করতে হবে।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, প্রকৌশল বিভাগে দক্ষ জনবল সংকট রয়েছে, আর যারা আছেন তারা অতিরিক্ত চাপে কাজ করছেন। তবু একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং প্রযুক্তিগত পরিদর্শন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক এ বি এম রওশন কবীর জানান, যান্ত্রিক ত্রুটি নিয়ে প্রকৌশল বিভাগই বিস্তারিত বলতে পারবে। সোমবার রাতে বিমানের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ত্রুটি সমাধানে সর্বোচ্চ সতর্কতা নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মালয়েশিয়ায় রয়েছেন এবং ফিরে এসে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেবেন।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়