বুধবার , ২০ আগস্ট ২০২৫
Wednesday , 20 August 2025
২৪ সফর ১৪৪৭

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৪:৪৪, ১৮ আগস্ট ২০২৫

আইসিইউ নির্মাণে ‘ফাঁকি’, ৫৬৪ কোটি টাকার হিসাবে গরমিল

আইসিইউ নির্মাণে ‘ফাঁকি’, ৫৬৪ কোটি টাকার হিসাবে গরমিল
ছবি: সংগৃহীত

পাঁচ বছরে খরচ হয়েছে হাজার কোটি টাকার বেশি। অথচ প্রকল্পের মূল লক্ষ্য পূরণ হয়নি। জেলা পর্যায়ে আইসিইউ স্থাপন ও কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবিলায় নেওয়া ‘কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস’ প্রকল্পের অগ্রগতি এখন হতাশাজনক। যন্ত্রপাতি অচল, কোথাও নেই জনবল, আবার কোথাও স্থাপিত আইসিইউ বন্ধ হয়ে গেছে। এরই মধ্যে প্রকল্পের ৫৬৪ কোটি টাকার অডিট আপত্তির জবাবও মেলেনি।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনা মহামারির সময় ৫০টি জেলায় ১০ শয্যার করে মোট ৫০০ আইসিইউ স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু এ পর্যন্ত চালু হয়েছে মাত্র ১৩টি জেলায়। একইভাবে শিশু ও মাতৃ-আইসিইউ চালুর কোনো অগ্রগতি নেই। পাশাপাশি ৫০টি জেলায় ২০ শয্যার এক হাজার আইসোলেশন ইউনিট নির্মাণের কাজও থেমে আছে শূন্য অগ্রগতিতে।

প্রকল্প পরিচালক ড. সাইফুল ইসলাম বলেন, “প্রকল্পের আওতায় বিশ্বব্যাংকের টাকা খরচের সময়সীমা ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে শেষ হয়েছে। কিন্তু পূর্ত কাজ শেষ না হওয়ায় যন্ত্রপাতি কেনা যায়নি। ফলে নির্মাণ ও স্থাপন উভয় ক্ষেত্রে বিলম্ব হয়েছে।”

অন্যদিকে আইএমইডি সচিব মো. কামাল উদ্দিন জানান, “আমরা প্রকল্পগুলো নিবিড়ভাবে তদারকি করছি। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, যন্ত্রপাতি কেনা হলেও সেগুলো ব্যবহার হয়নি বা অচল অবস্থায় পড়ে আছে। আবার কোথাও অবকাঠামোগত ঘাটতি এতটাই প্রকট যে ইউনিট চালু রাখা সম্ভব হয়নি।”

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, কুমিল্লা, যশোর, টাঙ্গাইল ও বরিশালের মতো জেলায় আইসিইউ চালু হলেও সেখানে চিকিৎসক, নার্স ও টেকনিশিয়ানের ঘাটতি তীব্র। প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণও নেই। ফলে অনেক জায়গায় রোগীরা প্রকৃত সুবিধা পাচ্ছেন না। যেমন যশোর জেনারেল হাসপাতালে চতুর্থ তলায় আইসিইউ স্থাপন করা হলেও লিফট কাজ না করায় রোগীরা সেখানে পৌঁছাতে হিমশিম খাচ্ছেন। টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ২০২১ সালে আইসিইউ চালু হলেও জনবল সংকটে ২০২৪ সালে তা বন্ধ হয়ে গেছে।

প্রকল্পে ব্যয়-অনিয়ম প্রসঙ্গে দেখা যায়, এখন পর্যন্ত ৭৬টি অডিট আপত্তি এসেছে। এর মধ্যে মাত্র আটটির জবাব দিয়েছে প্রকল্প অফিস। বাকিগুলোর কোনো সমাধান হয়নি। আইএমইডির ভাষ্য, এসব অডিট আপত্তি অনেকাংশে সঠিক হলেও কিছু ক্ষেত্রে ডুপ্লিকেট বা অযৌক্তিক নথি রয়েছে।

প্রকল্পটি শুরু হয়েছিল ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে। ব্যয় ধরা হয়েছিল ছয় হাজার ৩৮৭ কোটি টাকা। উদ্দেশ্য ছিল মহামারির সময় চিকিৎসা সুবিধা বাড়ানো এবং ভবিষ্যতে যেকোনো মহামারি মোকাবিলায় স্বাস্থ্যখাতকে প্রস্তুত করা। ইতিমধ্যে এক হাজার ৬১৮ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু কাজের অগ্রগতি মাত্র ৭৬ শতাংশ। সময়মতো শেষ না হওয়ায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়টিও এখন বিবেচনায় আছে।

আইএমইডির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, যেসব যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে, সেগুলোর অনেকই সঠিক মডেলের নয় কিংবা ব্যবহারযোগ্য অবস্থায় নেই। আবার কিছু সরবরাহকারী ছিল অযোগ্য। এ কারণে অনেক জেলা হাসপাতালে আইসিইউ ইউনিট থাকলেও তা কার্যত অকেজো।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জরুরি ভিত্তিতে ৫০০ নার্স, ২০০ চিকিৎসক ও সমপরিমাণ টেকনিশিয়ান নিয়োগের পরিকল্পনা করলেও গত পাঁচ বছরেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে আইসিইউ স্থাপনের লক্ষ্য ব্যাহত হয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, করোনা মোকাবিলার নামে নেওয়া প্রকল্পগুলোতে সঠিক পরিকল্পনার অভাব ছিল। বরং প্রকল্পের অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্রই বেশি ধরা পড়েছে। এ অবস্থায় আইএমইডি সচিব বলেন, “যে প্রকল্প বাস্তবায়নযোগ্য, আমরা সেগুলো এগিয়ে নিচ্ছি। আর যেগুলো বাস্তবায়নের সম্ভাবনা নেই, সেগুলো বাদ দেওয়ার সুপারিশ করা হচ্ছে।”

সর্বশেষ

জনপ্রিয়