যুক্তরাষ্ট্রে ছোট ব্যবসাগুলো টিকে থাকার লড়াইয়ে, বিপদে বিশ্ব বাণিজ্য

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষিত পারস্পরিক শুল্কের সময়সীমা ১ আগস্ট শেষ হচ্ছে। নির্ধারিত সময়ের আগেই নতুন চুক্তিতে না পৌঁছালে ১০ শতাংশ শুল্ক বাড়তে পারে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত। এতে অনিশ্চয়তায় পড়েছে শতাধিক দেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের হাজার হাজার ছোট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান।
বিশ্লেষকদের মতে, বিভ্রান্তিকর ও অস্থির বাণিজ্যনীতির কারণে বেশিরভাগ কোম্পানির পক্ষেই নির্ভরযোগ্য পরিকল্পনা করা এখন কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় ক্ষতির মুখে রয়েছে ছোট ব্যবসাগুলো, যেগুলোর বেশিরভাগই বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি করে।
মার্কিন বাণিজ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, আমদানি করা পণ্যের ৯৭ শতাংশ আসে ছোট ব্যবসাগুলোর মাধ্যমে। তাদের মধ্যে অনেকে নীতির ধাক্কায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, কেউ কেউ ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার চিন্তাও করছেন।
ন্যাশনাল রিটেইল ফেডারেশনের সরবরাহ শৃঙ্খলা ও কাস্টমস নীতির ভাইস প্রেসিডেন্ট জোনাথন গোল্ড বলেন, কোনো নির্দিষ্ট সরবরাহকারী নতুন চুক্তিতে যাবে কি না বা কোন পণ্য বেশি শুল্কের আওতায় পড়বে- তা জানার উপায় নেই। এর ফলে খুচরা ব্যবসায়ীরা যেমন পরিকল্পনা করতে পারছেন না, তেমনি ভোক্তারাও বেশি দামে পণ্য কিনতে বাধ্য হচ্ছেন।
ট্রাম্প প্রশাসন ইতিমধ্যে ডজনখানেক দেশকে চিঠি দিয়ে সতর্ক করেছে- আগামী ১ আগস্টের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি না হলে আমদানির ওপর শুল্ক বাড়তে পারে ৩৬ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত। যেমন- কম্বোডিয়া ৩৬ শতাংশ, মিয়ানমার ৪০ শতাংশ ব্রাজিল ৫০ শতাংশ।
বর্তমানে মাত্র ৭টি দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন শুল্ক কাঠামোয় সম্মত হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন সম্প্রতি ১৫ শতাংশ শুল্কে একটি চুক্তি করেছে।
ব্যবসায়ী সারা ওয়েলস বলেন, আমি চীনের শুল্ক বৃদ্ধির পর ফেব্রুয়ারিতে ব্যাগ উৎপাদন সরিয়ে নিয়েছিলাম কম্বোডিয়ায়। এখন আবার সেখানেও ৩৬ শতাংশ শুল্ক আসছে। ইতিমধ্যে আমি এক লাখ ডলারের অর্ডার দিয়ে ফেলেছি।”
তিনি আরও বলেন, আমি নিজ বেতন নেওয়া বন্ধ করেছি। সব অপ্রয়োজনীয় খরচ কেটে দিয়েছি। সামনে হয়তো কর্মী ছাঁটাই ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।
নিউইয়র্কভিত্তিক মাঝারি আকারের ওয়াইন কোম্পানি ওলফার এস্টেট ভিনইয়ার্ডের সিইও ম্যাক্স রন জানান, “আমরা জানি না আগামী সপ্তাহে কী ঘটবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যেকোনো মুহূর্তে সিদ্ধান্ত পাল্টাতে পারেন।” তাদের প্রতিষ্ঠান ২০ হাজার বাক্স ওয়াইন আগেভাগে আমদানি করেছে যেন আগস্টের আগেই মার্কিন বন্দরে পৌঁছে যায়।
তিনি বলেন, আমরা এখনো দাম বাড়াইনি। কিন্তু আগামীতে দাম বাড়ানো ছাড়া উপায় থাকতে নাও পারে।
মেক্সিকোতে আমেরিকান চেম্বার অব কমার্সের প্রধান পেদ্রো আলাত্রিস্তে বলেন, বড় কর্পোরেশনগুলো ওয়াশিংটনে সক্রিয়ভাবে লবিং করছে। তারা কৌশলগতভাবে কাজ করে। কিন্তু ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো কেবল টিকে থাকতে চায়।
বর্তমান পরিস্থিতিকে অনেকেই নীতিগত দিশাহীনতা হিসেবে উল্লেখ করছেন। কেউই নিশ্চিত নন, আগামী সপ্তাহে কী হবে। অনেক ব্যবসায়ী বলছেন, আমরা একে অন্যকে জিজ্ঞেস করছি-এখন কী করব? কিন্তু কারও কাছেই জবাব নেই।