শনিবার , ০২ আগস্ট ২০২৫
Saturday , 02 August 2025
০৭ সফর ১৪৪৭

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৫:০৬, ২ আগস্ট ২০২৫

আপডেট: ১৫:০৬, ২ আগস্ট ২০২৫

কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে নয় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, উদ্বেগ বাড়াচ্ছে অপরাধপ্রবণতা

কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে নয় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, উদ্বেগ বাড়াচ্ছে অপরাধপ্রবণতা
ছবি: সংগৃহীত

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার পতনের পর থেকে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রীতিমতো টালমাটাল হয়ে পড়ে। থানা-পুলিশ ফাঁড়ি ভাঙচুর, অস্ত্র লুট, ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলার মতো ঘটনায় সারা দেশে নিরাপত্তাহীনতা ছড়িয়ে পড়ে। এরপর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এক বছর পার হলেও কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় ফিরে আসেনি দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি।

ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর পুলিশ বাহিনীকে ঢেলে সাজানো, মনোবল ও দক্ষতা বাড়াতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। তবু মব ভায়োলেন্স, খুন, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, দস্যুবৃত্তিসহ বিভিন্ন অপরাধ বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে। ১১ মাসে (আগস্ট ২০২৪–জুন ২০২৫) দেশে মামলা হয়েছে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৭৮৮টি।

মানবাধিকার সংস্থা 'অধিকার'-এর তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হয়েছে ২৯টি, কারাগারে মৃত্যু হয়েছে ৬১ জনের, সাংবাদিক আক্রান্ত হয়েছেন ১৬৫ জন। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ধর্ষণের ঘটনা ৪৪১টি, যার মধ্যে ২২ জনকে হত্যা করা হয়েছে। মব ভায়োলেন্সে নিহত হয়েছেন ৮৯ জন।

অপরাধ বিশ্লেষক আব্দুল কাদের মিয়া বলেন, “৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে পুলিশের কর্মক্ষমতায় ঘাটতি ও জনগণের আস্থার সংকট আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।” পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্যমতে, প্রতিদিন গড়ে ১১টি খুনের ঘটনা ঘটছে। আগের সরকার আমলে দায়ের না হওয়া বহু মামলাও এখন রুজু হচ্ছে, যার ফলে মামলার সংখ্যা আরও বেড়েছে।

সম্প্রতি পুরান ঢাকায় প্রকাশ্যে ব্যবসায়ী সোহাগকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। পাশাপাশি শিশু ধর্ষণ ও হত্যা, রাজনৈতিক চাঁদাবাজির মতো নৃশংস অপরাধ সমাজে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।

পুলিশের অতিরিক্ত আইজি রফিকুল ইসলাম বলেন, “অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আমরা অনেক দূর এগিয়েছি। তদন্ত প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার চেষ্টা চলছে।” পুলিশের মিডিয়া ও জনসংযোগ বিভাগের এআইজি শাহাদাত হোসেন জানান, সারা দেশে সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি দমন, টহল জোরদার, সাইবার অপরাধ প্রতিরোধসহ বহুমুখী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। অনলাইন জিডি, ৯৯৯ হটলাইন ও প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ দমন ব্যবস্থা চালু রাখা হয়েছে।

তবু বাস্তবতা হলো, অপরাধ দমন ও জনআস্থা ফিরে পেতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আরও জবাবদিহিমূলক ও পেশাদার আচরণ নিশ্চিত করা জরুরি। পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে ঠিকই, তবে দেশের মানুষের প্রত্যাশিত নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করতে গেলে সামনে আরও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে।
 

সর্বশেষ

জনপ্রিয়