ঐতিহাসিক চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক কমলো, কূটনীতিতে বাংলাদেশের বড় অর্জন

বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য আলোচনা শেষ পর্যন্ত নিয়ে এল বড় সাফল্য। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শেষমেশ বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যে ‘পাল্টা শুল্ক’ কমিয়ে ২০ শতাংশ নির্ধারণ করেছেন। বৃহস্পতিবার রাতে ওয়াশিংটনে তৃতীয় দফা আলোচনার পর এই সিদ্ধান্ত আসে। যদিও শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা ছিল ১ আগস্ট থেকে, প্রস্তুতির জন্য ৭ আগস্ট পর্যন্ত সময় চাওয়া হয়েছে।
এই সমঝোতার বিনিময়ে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রকে কী কী সুবিধা দিয়েছে, তা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়নি। তবে আলোচনার সূত্র ধরে জানা গেছে, বাংলাদেশ বড় অঙ্কে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়াতে সম্মত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ২৫টি বোয়িং উড়োজাহাজ কেনা, ৩৫ লাখ টন গম আমদানি এবং তুলা ও সয়াবিনের বেসরকারি পর্যায়ের চুক্তি।
সরকার এই চুক্তিকে কূটনৈতিক সাফল্য হিসেবে তুলে ধরেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এক অভিনন্দন বার্তায় বলেছেন, “এই চুক্তি আমাদের অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষায় একটি বড় পদক্ষেপ। এটি আমাদের বৈশ্বিক অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করেছে।”
অন্যদিকে, বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন জানিয়েছেন, “২০ শতাংশ শুল্ক হার আমাদের প্রতিযোগীদের সঙ্গে তুলনামূলকভাবে ভালো অবস্থানে রেখেছে।” তবে তিনি স্বীকার করেন, বাংলাদেশ আরও কম শুল্ক প্রত্যাশা করেছিল।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়লেও, চীন ও ভারতের সঙ্গে চলমান আলোচনা নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে। ঢাবির অর্থনীতিবিদ ড. সেলিম রায়হান সতর্ক করে বলেন, “শুল্ক কমানোর বিনিময়ে বাংলাদেশ কতটা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তা এখনও অস্পষ্ট। স্বচ্ছতা ও দীর্ঘমেয়াদি কৌশল এখানে গুরুত্বপূর্ণ।”
চুক্তির কিছু অংশ ইতোমধ্যে প্রকাশিত হলেও, নন-ডিসক্লোজার চুক্তির কারণে কিছু শর্ত এখনও গোপন রয়ে গেছে। বাণিজ্য বিশ্লেষক ড. মোস্তফা আবিদ খান মনে করেন, “আশা করি সরকার শিগগিরই এসব শর্ত প্রকাশ করবে, যাতে জনগণের আস্থা অটুট থাকে।”
এদিকে, শুল্ক ছাড়ে সবচেয়ে বেশি আশার আলো দেখছেন রপ্তানিকারকরা। তারা বলছেন, ৩৫ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে নামিয়ে আনা তাদের জন্য এখন বড় স্বস্তির খবর। তবে শর্তসাপেক্ষ এ ছাড় যে ভবিষ্যতে চ্যালেঞ্জও বয়ে আনতে পারে, সে ব্যাপারেও সতর্ক তারা।