সোমবার , ১১ আগস্ট ২০২৫
Monday , 11 August 2025
১৫ সফর ১৪৪৭

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৭:০৮, ৯ আগস্ট ২০২৫

চৌরাস্তা-টঙ্গী অপরাধীদের আস্তানা, সাত মাসে ১০৩ খুন

চৌরাস্তা-টঙ্গী অপরাধীদের আস্তানা, সাত মাসে ১০৩ খুন
ছবি: সংগৃহীত

গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় গত বৃহস্পতিবার রাতে খুন হয়েছেন সাংবাদিক মো. আসাদুজ্জামান তুহিন। এক দল দুর্বৃত্ত প্রকাশ্যে দা, চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে তাঁকে হত্যা করে। আগের দিন বুধবার বিকেলে নগরীর সাহাপাড়া এলাকায় বেদম মারধরের শিকার হন আরেক সাংবাদিক আনোয়ার হোসেন। প্রকাশ্যে টেনেহিঁচড়ে, পিটিয়ে ও ইট দিয়ে আঘাত করে তাঁর পা থেঁতলে দেওয়া হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় তিনি এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

 

এ দুই ঘটনার রেশ না কাটতেই গতকাল শুক্রবার টঙ্গীর স্টেশন রোড এলাকায় টঙ্গী-ঘোড়াশাল আঞ্চলিক সড়কের পাশ থেকে একটি ব্যাগের ভেতরে পাওয়া যায় এক যুবকের খণ্ডিত মরদেহ। শুধু এ কয়েকটি ঘটনাই নয়; গত ৭ মাসে গাজীপুর মহানগর ও জেলায় ১০৩টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। রাজনীতি, মাদক, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, পূর্বশত্রুতা, জমাজমি, পারিবারিক বিরোধসহ নানা কারণে এসব হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এ ছাড়া প্রায় প্রতিদিন টঙ্গীসহ আশপাশ এলাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। প্রকাশ্যে চাপাতি নিয়ে হামলার ছবিও ভাইরাল হয়েছে।

 

পাশাপাশি গাজীপুর চৌরাস্তা, চান্দনা, টঙ্গী, নগরীর বেশ কিছু স্পট অপরাধীদের চিহ্নিত আস্তানা হয়ে উঠলেও তাদের প্রতিকারে জোরালো কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে গাজীপুরের সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে তারা প্রশ্ন তুলছেন।

 

গত শনিবার রাতে শ্বাসরোধ ও পিটিয়ে হত্যার পর স্ত্রী মারুফা আক্তারের লাশ ঘরের ভেতর রেখে বাইরে আগুন ধরিয়ে দেয় স্বামী মিজানুর রহমান। তিন বছর আগে প্রথম স্বামীর সংসার ছেড়ে পল্লিচিকিৎসক মিজানুর রহমানকে বিয়ে করেছিলেন মারুফা (৪৫)। পারিবারিক কলহের জেরে এ ঘটনা ঘটে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

 

এর আগে গত বুধবার মধ্যরাতে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউনিয়নের মধ্যপাড়া গ্রামে সুইটি আক্তার নামে এক গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যা করে তাঁর স্বামী নূরুল ইসলাম। বিয়ের পর থেকেই সুইটি আক্তারের সঙ্গে স্বামী নূরুল ইসলামের বনিবনা হচ্ছিল না। পুলিশ বলছে, এরই জের ধরে স্ত্রী সুইটিকে পিটিয়ে হত্যা করে স্বামী নূরুল ইসলাম। গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যার খবর ছড়িয়ে পড়লে বৃহস্পতিবার সকালে এলাকাবাসী নূরুল ইসলামের দুটি বাড়ি আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে ফেলে। তারও আগে গত ২৮ জুন গাজীপুরের কোনাবাড়ী এলাকার গ্রিনল্যান্ড গার্মেন্টস কারখানার ভেতরে চোর সন্দেহে হৃদয় মিয়া নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয় ।

 

এসব ছাড়াও ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান কিংবা গভীর কোনো বনের ভেতর প্রায়ই লাশ পাওয়া যাচ্ছে। হত্যার পর লাশ বনের ভেতর বা সড়কের পাশে ফেলে রাখার নিরাপদ স্থান মনে করে খুনিরা। জ্ঞাত হিসেবে অনেক লাশ পুলিশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়। বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়। শেষ পর্যন্ত পরিচয় মেলে না খুনের শিকার মানুষের।

 

গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপার চৌধুরী মো. যাবের সাদেক জানান, গত সাত মাসে গাজীপুর জেলার শ্রীপুর, কালিয়াকৈর, কালীগঞ্জ, কাপাসিয়া ও সদর থানা এলাকায় ৫৯টি হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে আমরা ৪৮টি ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন করতে পেরেছি। এরই মধ্যে বিভিন্ন মামলার ৫২ জনকে গ্রেপ্তার করে আমরা আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছি। বেশির ভাগ হত্যাই জমাজমি ও পারিবারিক সমস্যাকে কেন্দ্র করে। মাদক ও নারী-সংক্রান্ত ঘটনাও আছে। তিনি বলেন, গত ১৭ বছরে দেশের একটা প্রজন্ম নষ্ট হয়ে গেছে। মূল্যবোধ নেই, সামাজিক অবক্ষয় হয়েছে। এ কারণে যে কোনো অপরাধ করতে আর তাদের বুক কাঁপে না। আইন বলতে যে একটা জিনিস আছে– সেটা তাদের মনেই হয় না।

 

গাজীপুর মহানগর পুলিশ সূত্র বলছে, গাজীপুর মহানগরের ৮টি থানা এলাকায় গত ৭ মাসে ৩৫টি হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি খুনের মামলা হয়েছে মহানগরের সদর থানায়। গত ৭ মাসে এ থানায় ১১টি হত্যা মামলা হয়েছে বলে জানান ওই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মেহেদী হাসান। এ ছাড়া কাশিমপুরে চারটি, কোনাবাড়ীতে তিনটি, টঙ্গী পশ্চিম থানায় চারটি, টঙ্গী পূর্ব থানায় আটটি, গাছা থানায় দুটি, পুবাইলে দুটি ও বাসন থানায় পাঁচটি।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়