মালয়েশিয়া সফরে যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা, প্রবাসীদের মধ্যে প্রত্যাশ

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস মালয়েশিয়া সফরে যাচ্ছেন আগামীকাল সোমবার। এরই মধ্যে তার এই সফর নিয়ে প্রবাসীদের মধ্যে প্রত্যাশার পারদ ক্রমেই বাড়ছে।
সরকারপ্রধানের এ সফরের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা বাংলাদেশের অন্যতম শ্রমবাজারটি খুলতে পারে, এমন আশায় বুক বাঁধছেন প্রবাসী বাঙালিরা। বিশেষ করে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে সফরটি নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা। সফরে কী পেতে যাচ্ছে নতুন বাংলাদেশ? বন্ধ শ্রমবাজার কি আবার খুলতে পারবে? এমন নানা প্রশ্ন প্রবাসীদের মনে।
মালয়েশিয়া প্রবাসী ব্যবসায়ী মো. আনিছুর রহমান বলেন, দীর্ঘদিনের সাধারণ শ্রমিক ও শিক্ষিত শ্রেণির মানুষেরও আশা এবার যেন বন্ধ শ্রমবাজারটি খুলে যায়। তাহলে দেশ থেকে প্রচুরসংখ্যক মানুষের মালয়েশিয়ায় কর্মসংস্থান হবে। সেই সঙ্গে প্রবাসী ১২ লাখ বাংলাদেশির অন্যান্য সমস্যারও সমাধান হবে।
আনিছুর বলেন, মালয়েশিয়া আমাদের এত বড় একটি শ্রমবাজার। অথচ গেলো সরকার এখানকার ভিসা বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টিকে কখনোই আমলে নেয়নি। শুধু আশার বাণী শুনেছি। প্রধান উপদেষ্টার মালয়েশিয়া সফর হবে বহু কাঙ্ক্ষিত একটি সফর।
‘মালয়েশিয়ায় প্রায় ১২ লাখ বাংলাদেশি যেন ভালো থাকে এটি যেমন চাই, তেমনি আরও বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি এখানে চাকরি পাবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।’ যোগ করেন আনিছুর।
আরেক প্রবাসী মকবুল হোসেন বলেন, ‘মালয়েশিয়া সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ড. ইউনূস বিদ্যমান অবৈধদের বৈধতা ও ভিসা জটিলতা নিরসন ছাড়াও বাণিজ্যিক সম্পর্ক সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন আশা করছি। শ্রমিক ভিসার সমাধান করা গেলে রেমিট্যান্স আরও বাড়বে। আমাদের আশা, বৈঠকে তিনি বাংলাদেশিদের ভিসা জটিলতা অবৈধদের বৈধতার বিষয়ে জোরালোভাবে তুলে ধরবেন এবং সমাধানের উদ্যোগ নেবেন।’
প্রধান উপদেষ্টার মালয়েশিয়া সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. শামীম আহসান।
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী বন্ধু আনোয়ার ইব্রাহিমের আমন্ত্রণে আগামীকাল সোমবার (১১ আগস্ট) দেশটিতে সফরে যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। দ্বিপাক্ষিক এ সফরে প্রতিরক্ষা, জ্বালানি ও হালাল খাদ্যসহ বিভিন্ন খাতে পাঁচটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর এবং তিনটি নোট বিনিময় হওয়ার কথা রয়েছে।
মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) কুয়ালালামপুরে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও আনোয়ার ইব্রাহিমের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণে জটিলতা, প্রতিরক্ষা, জ্বালানি, ব্যবসা-বাণিজ্য, উচ্চশিক্ষা, রোহিঙ্গা সংকট, কৃষি, হালাল খাদ্য ও সমুদ্র অর্থনীতি এবং আসিয়ানসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দুই দেশের সহযোগিতাসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হতে পারে এমনটি জানা গেছে ঢাকা-কুয়ালালামপুরের কূটনৈতিক সূত্রে।
শীর্ষ পর্যায়ের এ বৈঠকের পর সমঝোতা স্মারকগুলো স্বাক্ষর করা হবে। এরপর বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে একটি ‘জয়েন্ট বিজনেস কাউন্সিল’ উদ্বোধনের পরিকল্পনা রয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার এ সফর নিয়ে বেশ আশাবাদী পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। তিনি সম্প্রতি গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা আশাবাদী যে অনেকগুলো বাধা দূর করতে পারব। প্রথমত, সর্বোচ্চ পর্যায়ে একটি সফর হচ্ছে; দ্বিতীয়ত, দুই দেশের সরকার প্রধানের মধ্যে ভালো রসায়ন আছে, আমরা সেটি কাজে লাগাবো।
সূত্রগুলো বলছে, দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষর হতে যাওয়া সম্ভাব্য এমওইউগুলোর মধ্যে রয়েছে- প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, জ্বালানি, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) ও ইনস্টিটিউট অব স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ (আইএসআইএস), বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (বিএমসিসিআই) ও মিমোস (মালয়েশিয়ান কোম্পানি), ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) ও মালয়েশিয়ান ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমআইসিসিআই)-এর মধ্যে চুক্তি।
এছাড়া যেসব বিষয়ে নোট বিনিময়ের কথা রয়েছে সেগুলো হলো- হালাল খাদ্য ব্যবস্থাপনা, ফরেন সার্ভিস একাডেমি ও ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমেসি অ্যান্ড ফরেন রিলেশনসের (আইডিএফআর) মধ্যে সহযোগিতা এবং উচ্চশিক্ষা খাত।
সফরটি সম্পর্কে অবহিত আছেন এমন একজন সরকারি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ইউনিভার্সিটি কেবাংসান মালয়েশিয়া (ইউকেএম) প্রধান উপদেষ্টাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি দেওয়া হবে।
সফরসূচি অনুযায়ী, মালয়েশিয়ায় পৌঁছানোর পর প্রধান উপদেষ্টাকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হবে। এরপর প্রধান উপদেষ্টা বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)-এর আয়োজনে একটি ব্যবসায়িক সেমিনারে অংশগ্রহণ করবেন। এরপর বাংলাদেশ কমিউনিটির সঙ্গে মতবিনিময়, ইউকেএম থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি গ্রহণ, কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশন ও মালয়েশিয়ার কয়েকজন মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক এবং প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাতের সম্ভাবনা রয়েছে দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী তুন ডা. মাহাথির মোহাম্মদের সঙ্গে।
প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হিসেবে থাকছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, পররাষ্ট্রসচিব আসাদ আলম সিয়ামসহ অন্যান্য কর্মকর্তা। আগামী ১৩ আগস্ট ঢাকার উদ্দেশে রওনা হওয়ার কথা রয়েছে প্রধান উপদেষ্টার।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে। ক্ষমতা গ্রহণের দুই মাস পর, গত বছরের অক্টোবরে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম ঢাকা সফর করেন। যা অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে প্রথম কোনো বিদেশি সরকার প্রধানের সফর ছিল।