প্রবাসীদের ভোট: ৪৯ কোটি টাকার প্রকল্পে অস্পষ্টতা ও সমন্বয়হীনতা

আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার নিশ্চিতের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোটগ্রহণের এই পরিকল্পনাকে সময়োপযোগী মনে করা হলেও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রস্তাবিত ৪৯ কোটি ২১ লাখ টাকার উন্নয়ন প্রকল্পে রয়েছে নানা অস্পষ্টতা, সমন্বয়হীনতা ও ব্যয়ের অসংগতি।
‘দেশের বাইরে ভোটদান সিস্টেম উন্নয়ন ও বাস্তবায়ন’ শীর্ষক এই প্রকল্পে অনলাইন ভোটিং সফটওয়্যার তৈরি, নিরাপত্তা যাচাই এবং পোস্টাল ভোটিং (আইটি সাপোর্টেড) পদ্ধতি চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত।
ইসির তথ্য অনুযায়ী, দেশে মোট ভোটার ১২ কোটি ৩৭ লাখ, যার মধ্যে প্রায় এক কোটি ৩০ লাখ ভোটার বিদেশে অবস্থান করছেন। প্রথম ধাপে ৫০ লাখ প্রবাসী ভোটারকে অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্য রয়েছে। ভোটের জন্য প্রবাসীদের একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নিবন্ধন করতে হবে, যেখানে মুখের ছবি ও এনআইডি যাচাইয়ের পর ডাক বিভাগ তাদের কাছে ব্যালট পাঠাবে। ভোটার নির্দিষ্ট প্রতীক চিহ্নিত করে ব্যালট ফেরত পাঠাবেন ডাক বিভাগের মাধ্যমে।
তবে পরিকল্পনা কমিশনের অভিযোগ—প্রস্তাবে কোন দেশগুলোতে ভোটগ্রহণ হবে, কত ভোটার অংশ নেবেন, সময়সূচি কী হবে এবং বিদেশে ভোট আয়োজনে কূটনৈতিক সমন্বয়ের পরিকল্পনা—এসবই অনির্দিষ্ট। ব্যয় প্রাক্কলনেও অসংগতি রয়েছে।
গত ৪ আগস্ট প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভায় এসব বিষয়ে ইসিকে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়। সিদ্ধান্ত হয়েছে—প্রস্তাবের অস্পষ্টতা দূর করে, ব্যয় যৌক্তিকভাবে ঠিক করে এবং আন্তমন্ত্রণালয় সমন্বয় যুক্ত করে নতুনভাবে প্রস্তাব জমা দিতে হবে।
নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হবে। তবে পোস্টাল সিস্টেমের ধীরগতি, বিদেশি সরকারের অনুমতি, প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা ও পরিচয় যাচাই—সবই বড় চ্যালেঞ্জ। তাদের পরামর্শ, পরিকল্পনা বাস্তবায়নে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ডাক বিভাগ ও আইটি বিভাগের ঘনিষ্ঠ সমন্বয় এবং পূর্ণাঙ্গ রোডম্যাপ অপরিহার্য।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রবাসীদের ভোটগ্রহণের উদ্যোগ প্রশংসনীয় হলেও বর্তমান প্রস্তাবের অস্পষ্টতা ও সমন্বয়হীনতা সমাধান না হলে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বড় বাধা আসতে পারে।