সচিবালয়ে ভাঙচুর ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে চারজন কারাগারে, আদালতে বিস্ফোরক মন্তব্য

বাংলাদেশ সচিবালয়ে ভাঙচুরের ঘটনায় চার যুবককে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জামসেদ আলম জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে এই আদেশ দেন। এ সময় বিচারক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশের কোনও লাইফ নেই। দেশটাই এখন লাইফ সাপোর্টে।
দুপুর ২টা ২০ মিনিটে আসামিদের আদালতে হাজির করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। শুনানির সময় আসামিপক্ষ জানায়, তারা শিক্ষার্থী, কেউ এইচএসসি পরীক্ষার্থী, কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। আইনজীবীরা বলেন, তারা আবেগতাড়িত হয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন, ইচ্ছাকৃত নয়। কারও কারও পরীক্ষা সামনে, কারো ভবিষ্যৎ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে বলেও উল্লেখ করা হয়।
বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সুফিয়ানকে নিয়ে আদালতের ভেতরে বেশ কিছুক্ষণ কথাবার্তা হয়। বিচারক জানতে চান, তুমি কেন গিয়েছিলে? জবাবে আবু সুফিয়ান বলেন, আমি যাইনি, আমাকে রাস্তায় থেকে ধরে নিয়ে গেছে। তিনি দাবি করেন, তিনি জুলাই আন্দোলনের একজন সমন্বয়ক ছিলেন।
বিচারক পরে বলেন, জুলাই আন্দোলনে যারা ভূমিকা রেখেছে, তারা এখন ষড়যন্ত্রের শিকার হচ্ছে? ওদের লাইফ তো অলরেডি শেষ। দেশেরও কোনও লাইফ নেই।
রাষ্ট্রপক্ষ থেকে বলা হয়, আসামিরা কেউ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত নয়। তারা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্ট। সচিবালয়ে ঢুকে সামনে থেকে ভাঙচুর করেছে। সিসিটিভি ফুটেজে তাদের দেখা গেছে।
এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের বক্তব্য দিতে গেলে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বাধা দিলে আদালতে হট্টগোল শুরু হয়। বিচারক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আপনারা হট্টগোল করলে আমি নেমে যাই। রাষ্ট্রের পক্ষে কথা বলে প্রসিকিউটর কয় টাকা পান? আপনারা তো আরও বেশি টাকা পান।
বিচারক বলেন, যদি রাষ্ট্রই না থাকে তাহলে ওদের সার্টিফিকেট দেবে কে? সচিবালয় হচ্ছে রাষ্ট্রের মাথা। মাথা আক্রান্ত হলে শরীর বাঁচে না। রাষ্ট্র এখন ট্রানজিশন পিরিয়ডে আছে। আমরা হয়তো জামায়াতের শাসনও দেখবো। আমাদের প্রজন্ম ভালো রাষ্ট্র দেখবে না, সন্তানেরা হয়তো দেখবে।
সবশেষে আদালত চার আসামির জামিন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
গত কিছুদিন ধরে কোটা সংস্কার ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন নিয়ে রাজধানীতে উত্তেজনা চলছে। সচিবালয়ে হামলার ঘটনায় রাষ্ট্রপক্ষের বক্তব্যে উঠে এসেছে গভীর উদ্বেগ ও সম্ভাব্য রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার ইঙ্গিত।