ওয়েবসাইটে জাল সনদে ৬৭ কোটি টাকার শুল্ক ফাঁকি: প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা সুপারিশ
সরকারের বন্ড সুবিধা নিয়ে তৈরি পোশাক শিল্পে আমদানি করা হয়েছে ১৩ লাখ কেজির বেশি কাপড়, অথচ এর পেছনে রয়েছে ভয়াবহ জালিয়াতির গল্প। সাবেক আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য জহিরুল হক ভূঁইয়া মোহনের মালিকানাধীন বি ব্রাদার্স লিমিটেড, কাস্টমসের ওয়েবসাইটে জাল ‘ফ্রি অব কস্ট (এফওসি)’ প্রত্যয়নপত্র আপলোড করে সরকারের ৬৭ কোটি টাকার শুল্ক ও কর ফাঁকি দিয়েছে।
কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট (ঢাকা দক্ষিণ) পরিচালিত তদন্তে উঠে এসেছে, গত ২০২৪ সালের ১০ নভেম্বর থেকে ২০২৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়কালে প্রতিষ্ঠানটি কোনো বৈধ অনুমোদন ছাড়া জাল প্রত্যয়নপত্র ব্যবহার করে ৭৪ কোটি টাকার পণ্য আমদানি করেছে। এতে শুল্ক ফাঁকির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। এ ঘটনায় জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে কমিশনারেটের এক সিস্টেম অ্যানালিস্ট গোলাম কবীরের বিরুদ্ধেও।
প্রতিষ্ঠানটি কোনো বৈধ আবেদন বা অনুমোদন ছাড়াই জাল কাগজ ওয়েবসাইটে আপলোড করে পণ্য খালাস করে। বন্ড কমিশনারেটের ওয়েবসাইটে এফওসি সনদ আপলোড করেন সংশ্লিষ্ট সিস্টেম অ্যানালিস্ট নিজেই। তদন্ত কমিটির কাছে তিনি লিখিতভাবে দায় স্বীকার করে জানান, এটি “অসাবধানতাবশত” হয়েছে, এবং ভবিষ্যতে এমন হবে না বলেও প্রতিশ্রুতি দেন।
তবে তদন্ত কমিটি তার এই ব্যাখ্যা মানেনি। বরং তার আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে বড় ধরনের জালিয়াতির প্রমাণ পেয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করেছে।
বি ব্রাদার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহিরুল হক মোহন গণঅভ্যুত্থানের পর থেকেই পলাতক। তার সঙ্গে যোগাযোগের একাধিক চেষ্টা ব্যর্থ হয়। প্রতিষ্ঠানটির চিফ ফিন্যান্সিয়াল অফিসার (সিএফও) শফিকুল ইসলাম বলেন, “আমি কোম্পানির ভ্যাট-ট্যাক্স দেখি না। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না।” তবে ভ্যাট-ট্যাক্স বিষয়ে যিনি দেখেন তার সঙ্গে যোগাযোগের নম্বর দিতেও অস্বীকৃতি জানান তিনি।
তদন্ত কমিটি বলছে, এই জালিয়াতি কেবল শুল্ক ফাঁকি নয়, এটি একটি পূর্ণাঙ্গ শাস্তিযোগ্য অপরাধ। বি ব্রাদার্সের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করার সুপারিশ করেছে তারা। একই সঙ্গে বন্ড সুবিধার অপব্যবহারের মাধ্যমে ফাঁকি দেওয়া ৬৭ কোটি টাকার অর্থ আদায়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণেরও সুপারিশ করা হয়েছে।
বি ব্রাদার্স লিমিটেডের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ নতুন নয়। ২০২০ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির প্রক্রিয়ায় শেয়ারমানি ভুলভাবে বিভিন্ন ব্যাংকে রাখাসহ একাধিক নিয়মভঙ্গের কারণে তাদের আইপিও আবেদন বাতিল করে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
জহিরুল হক ভূঁইয়া মোহন ১৯৯৬ সাল থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। রূপগঞ্জে গড়ে তোলা বি ব্রাদার্স লিমিটেডের অধীনে দুটি ইউনিট চালান তিনি। ক্ষমতাসীন সরকারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে একাধিকবার সংসদ সদস্য হন এবং ব্যবসায়িক সুবিধা পান বলেও অভিযোগ রয়েছে।





































