প্রাথমিক প্রধান শিক্ষকদের দশম গ্রেডে বেতন: কী সুবিধা মিলবে

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের বেতন স্কেল দশম গ্রেডে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে সরকার। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বছরে সরকারের অতিরিক্ত ব্যয় হবে প্রায় ৩৪৯ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় একে যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করে বলেছে, এটি শিক্ষক সমাজের প্রতি সরকারের দায়বদ্ধতা ও সম্মান প্রদর্শনের প্রতিফলন।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে মোট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৫ হাজার ৫০২টি। এর মধ্যে বর্তমানে প্রধান শিক্ষক পদে কর্মরত আছেন ৩১ হাজার ৩৯৬ জন। তাদের মধ্যে ১ হাজার ১৫৪ জন ১২তম গ্রেডে, ১৩ হাজার ৮৫৪ জন ১১তম গ্রেডে এবং বাকি ১৬ হাজার ৩৮৮ জন এরই মধ্যে উচ্চতর গ্রেডে উন্নীত হয়েছেন।
১২তম গ্রেডপ্রাপ্ত ১ হাজার ১৫৪ জন প্রধান শিক্ষক দশম গ্রেডে উন্নীত হলে তাদের মূল বেতন বাড়বে ৪,৭০০ টাকা, বাড়িভাড়া ভাতা গড়ে ৪২ শতাংশ হারে ১,৬৩৫ টাকা, বিশেষ ভাতা ৭০৫ টাকা, উৎসব ভাতা ৪,৭০০ টাকা এবং নববর্ষ ভাতা ৯৪০ টাকা। এ গ্রুপের জন্য সরকারের অতিরিক্ত ব্যয় হবে বছরে ১০ কোটি ৯৪ লাখ টাকা।
একইভাবে ১১তম গ্রেডপ্রাপ্ত ১৩ হাজার ৮৫৪ জন শিক্ষকের মূল বেতন বাড়বে ৩,৫০০ টাকা, বাড়িভাড়া ভাতা ১,০৯৫ টাকা, বিশেষ ভাতা ৫২৫ টাকা, উৎসব ভাতা ৩,৫০০ টাকা এবং নববর্ষ ভাতা ৭০০ টাকা। এদের জন্য অতিরিক্ত ব্যয় হবে ৯৫ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।
উচ্চতর গ্রেডপ্রাপ্ত ১৬ হাজার ৩৮৮ জন শিক্ষক এরই মধ্যে দশম গ্রেডের চেয়ে বেশি বেতন-ভাতা পাচ্ছেন, ফলে নতুন সিদ্ধান্তে তাদের বেতন কাঠামো অপরিবর্তিত থাকবে।
বর্তমানে প্রধান শিক্ষকের ৩৪ হাজার ১০৬টি পদ শূন্য রয়েছে। এর মধ্যে ৩১ হাজার ৪৫৯টি পদ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণযোগ্য এবং ২ হাজার ৬৪৭টি পদ সরাসরি নিয়োগযোগ্য। পদোন্নতির মাধ্যমে যাঁরা প্রধান শিক্ষক হবেন, তাদের বেতন বাড়বে ৩,৫০০ টাকা, ভাড়া ভাতা ১,০৯৫ টাকা, বিশেষ ভাতা ৫২৫ টাকা, উৎসব ভাতা ৩,৫০০ টাকা এবং নববর্ষ ভাতা ৭০০ টাকা। এ খাতে সরকারের ব্যয় বাড়বে ২১৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্তদের ক্ষেত্রেও বেতন কাঠামো হবে ১২তম গ্রেড থেকে দশম গ্রেডে উন্নীত হওয়ায় সমান। তাদের জন্য ব্যয় বাড়বে ২৫ কোটি ৯ লাখ টাকা।
দশম গ্রেড বাস্তবায়নের পেছনে রয়েছে আদালতের রায় ও শিক্ষক সমাজের দীর্ঘদিনের আন্দোলন। ৪৫ জন প্রধান শিক্ষক হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। আদালত রায়ে তাদের দশম গ্রেডে উন্নীত করার নির্দেশ দিলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় তা বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেয়। পরে শিক্ষকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে দেশের সব প্রধান শিক্ষককে একই সুবিধা দিতে প্রস্তাব পাঠানো হয় এবং সেটিই এবার অনুমোদন পেল।
এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে শিক্ষক নেতারা। বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম বলেন, “প্রধান শিক্ষকদের দশম গ্রেড দেওয়ায় আমরা খুশি, তবে সহকারী শিক্ষক, সিনিয়রদের শতভাগ পদোন্নতি, এবং চাকরির ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড দেওয়ার দাবি মানতে হবে। এই দাবিগুলোর বাস্তবায়নের জন্য সরকারকে ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে, অন্যথায় ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে লাগাতার অনশন কর্মসূচি শুরু হবে।”
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, “শিক্ষকদের এই দাবি অনেক পুরোনো। আদালতের রায় এবং সরকারের সদিচ্ছার ফলেই এখন তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে। আমরা আশা করি, এটি প্রাথমিক শিক্ষায় গুণগত পরিবর্তন আনবে।”
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “প্রধান শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণ করা হলো। এ সিদ্ধান্ত তাদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এবং সামাজিক মর্যাদা বাড়াবে। এর ফলে তারা আরও উদ্দীপ্ত ও সৃজনশীলভাবে কাজ করবেন, যা শিক্ষার মানোন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।”
ৃ