রোববার , ১০ আগস্ট ২০২৫
Sunday , 10 August 2025
১৫ সফর ১৪৪৭

ডেস্ক নিউজ

প্রকাশিত: ২২:০৫, ৯ আগস্ট ২০২৫

ডিপফেকের শিকার দেশের শতাধিক তারকা, কী বলছে পুলিশ

ডিপফেকের শিকার দেশের শতাধিক তারকা, কী বলছে পুলিশ
ছবি: সংগৃহীত

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহজলভ্যতা ও জনপ্রিয়তা বাড়ার ফলে ডিপফেক ছবি-ভিডিও এখন হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। গেল বছর রাশমিকা মান্দানার ভুয়া একটি ভিডিও দিয়ে আলোচনায় আসে তারকাদের ডিপফেক। এরপর প্রিয়াঙ্কা চোপড়া, আলিয়া ভাট, কাজলসহ অনেক তারকার ডিপফেক ভিডিও চারদিকে হইচই ফেলে। শুধু বলিউড নয় বাংলাদেশের পরীমণি-শবনম বুবলী থেকে শুরু করে পূজা চেরি-সাদিয়া আয়মানসহ দেশের তারকা শিল্পীদের ডিপফেক ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় বিব্রত তারা। বিষয়টি প্রতিকারের জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন শিল্পীরা।

বর্তমানে দেশের প্রথম সারির বেশির ভাগ অভিনেত্রী ডিপফেকের শিকার হয়েছেন। এই শিল্পীদের ছবি ব্যবহার করে বানানো হচ্ছে অশ্লীল কনটেন্ট। বিদেশি নারীদের দেহে বাংলাদেশি তারকাদের মুখ প্রতিস্থাপন করে সামাজিক মাধ্যমে ছবিগুলো প্রকাশ করতেই তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।

ফ্যাক্টচেকার ও ডিফেন্ট এর সম্পাদক কদরুদ্দীন শিশির বলেন, ‘আমরা খেয়াল করছি, সম্প্রতি ডিপফেক ভিডিও বা ছবি বিনোদন ও রাজনৈতিক মানুষদের নিয়েই বেশি হচ্ছে। ফেসবুকে ছবি পোস্ট করে অর্থ উপার্জনের একটা ব্যাপার আছে। অনেকে এআই দিয়ে ছবি বানিয়ে টাকাও উপার্জন করছে। কিন্তু অনুমতি না নিয়ে অন্যের ছবি ব্যবহার করা সম্পূর্ণ অনৈতিক। আর সেটা যদি হয় ডিপফেক ছবি-ভিডিও, তাহলে সেটা আরও ভয়ঙ্কর অপরাধ। ক্রমেই এগুলো বাড়ছে এবং বাড়বে।

গেল কয়েক মাসে শবনম বুবলী, বিদ্যা সিনহা মিম, মাহিয়া মাহি, শবনম ফারিয়া, নুসরাত ইমরোজ তিশা, মেহজাবীন চৌধুরী, রাফিয়াত রশিদ মিথিলা, তানজিন তিশা, তানজিম সাইয়ারা তটিনী, সাদিয়া আয়মান, পারসা ইভানা, সুনেরাহ বিনতে কামাল, নাজনীন নাহার নিহা, প্রার্থনা ফারদিন দিঘীসহ ৬০ জনের বেশি তারকার ডিপফেপ ছবি শনাক্ত করেছে রিউমার স্ক্যানার বাংলাদেশ। ছবিগুলো কার, প্রথম কে আপলোড করেছে সেটাও জানিয়েছে তারা। এর বাইরেও প্রতিনিয়ত সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে তারকাদের অশ্লীল ছবি। সব মিলিয়ে সংখ্যাটা শতশত হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সম্প্রতি মেহজাবীন চৌধুরীর কয়েকটি ছবি ভেসে বেড়াচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে। আদতে ছবিগুলো বানানো হয়েছে এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে। বিষয়টি নিয়ে বিব্রত এই অভিনেত্রী। ডিপফেক প্রতিরোধে কঠোর আইন, জনসচেতনতা ও নারীদের সম্মানজনক পরিবেশ তৈরি করার দাবি জানালেন এই অভিনেত্রী।

মেহজাবীন বলেন, “এআই যখন ভুল মানুষের হাতে পড়ে, তখন তা ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষ করে নারী শিল্পীদের ক্ষেত্রে এটা ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করেছে। নারীদের ছবি ও ভিডিও বিকৃত করে টাকার লোভে তারকাদের ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিচ্ছে অনেকেই। এটা খুব নোংরা মানসিকতার পরিচয়, অনৈতিক এবং অপরাধ। আশা করি, আমাদের দেশে দ্রুত এমন নিয়ম-কানুন ও শাস্তির ব্যবস্থা হবে, যা সবাই বিশেষ করে নারীদের জন্য একটি নিরাপদ ও সম্মানজনক পরিবেশ তৈরি করবে।

ডিপফেক প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে কদরুদ্দীন শিশির বলেন, ‘প্রথমত, মানুষের লিগ্যালিটি বাড়াতে হবে। সেই সঙ্গে সচেতন হতে হবে। দ্বিতীয়ত, গুটিকয়েক মানুষ এগুলো বানায়। এই গুটিকয়েক অপরাধীকে শনাক্ত করে আইনের মাধ্যমে যদি শাস্তির ব্যবস্থা করা যায়, তাহলে এটা বন্ধ করা সম্ভব। এছাড়া আরও কোনো উপায় আমাদের চোখে পড়ছে না।

তিনি বলেন, “গত এক মাস আগে যুক্তরাষ্ট্র টেক ইট ডাউন অ্যাক্ট পাশ করেছে। এই আইনে বলা হয়েছে করো ছবি অনুমতি ছাড়া যদি কেউ ব্যবহার করে তাহলে তার শাস্তি হবে। এছাড়া সুইডেনে এখন একটা আইন করা হয়েছে যেখানে একজন মানুষের চেহারাসহ প্রত্যেকটি অঙ্গের কপিরাইট তার নিজের। চাইলে অনুমতি ছাড়া কেউ ব্যবহার করতে পারবে না। আমাদের দেশে সেটা নেই। তবে আমাদের দেশে সাইবার নিরাপত্তা আইন আছে এটার মাধ্যমে শাস্তির ব্যবস্থা করলে এ ধরনের অপরাধ অনেকটাই কমে আসবে। এছাড়া এখন প্রযুক্তি নিয়ে আমাদের বেশি সচেতন থাকতে হবে। কোনো কিছু জাস্টিফাই না করে শেয়ার করা যাবে না। এটার কোনো বিকল্প নাই।

কারও অনুমতি ছাড়া আপত্তিকর ছবি কিংবা ভিডিও বানিয়ে প্রকাশ করা সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩-এ দণ্ডনীয় অপরাধ। ভুক্তভোগীরা বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সাইবার পুলিশ সেন্টার, ডিএমপির সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগ ও পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেনের অভিযোগকেন্দ্রে অভিযোগ জানাতে পারেন।

তিনি আরও বলেন, “এইআই দিয়ে কাজের ফলে মানুষ যেসব সমস্যার মুখোমুখি হয় বা অপরাধের শিকার হয় সেখানে আমাদের কাজের সুযোগ আছে। সেখানে আমরা অবশ্যই কাজ করব। আমরা ঢাকা মেট্রোপলিটনে দুই কোটি মানুষের জন্য নিরাপদ সাইবার প্ল্যাটফর্ম উপহার দিতে চাই।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়