পোড়া ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে নির্বাক শিক্ষার্থীরা

মাইলস্টোনে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে যে ভবনটি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেটি ঘিরে রাখা হয়েছে নীল রঙের টিন দিয়ে। শিক্ষার্থীরা সেই টিনে ঘেরা ভবনের সামনে নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকছে।
সকাল থেকে অনেক শিক্ষার্থী এসেছে শোকের প্রাঙ্গণে। চিরচেনা কোলাহল-হৈ-হুল্লোড কিছুই নেই; কারও মুখে কোনো কথা নেই। কেউ কেউ সোজা চলে যাচ্ছে সেই টিনঘেরা অংশের কাছে। দাঁড়িয়ে থাকছে কিছুক্ষণ। কেউ চুপচাপ চোখ মুছছে, তারপর সরে যাচ্ছে সেখান থেকে। আশপাশে পায়চারি করছেন কয়েকজন কলেজকর্মী ও নিরাপত্তারক্ষী।
আগুন নিভেছে প্রায় দুই সপ্তাহ হয়ে গেছে। কিন্তু পোড়া গন্ধ এখনো রয়ে গেছে। ৩৩ প্রাণ হারানোর শোকে ৩ দফায় ১২ দিন বন্ধ থাকার পর আজ রোববার সীমিত পরিসরে খুলেছে মাইলস্টোন কলেজের উত্তরা ক্যাম্পাস। ক্লাস পরীক্ষা হবে না, হবে শুধু শোকে বিহ্বল শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পারষ্পরিক সান্ত্বনার বিনিময়।
দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী মাহিন আল রাব্বি বলেন, এই ভবনেই বাচ্চাদের ক্লাস হতো। এখনও বিশ্বাস হয় না, যেখানে তারা ক্লাস করত সেটা এভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে; এভাবে ঝরে গেছে আমাদের তাজা তাজা ফুলগুলো। প্রতিদিন কত হৈচৈ ছুটোছুটি হতো এখানে। কী থেকে কী হয়ে গেল!
আরেক শিক্ষার্থী রাইশা তাবাসসুম বলেন, দুর্ঘটনার কথা মোটেই ভুলতে পারছি না। আমরা অনেক বেশি শোকাহত। দীর্ঘদিন মনের মধ্যে এই শোক গেঁথে থাকবে।
আগামী ৬ আগস্ট (বুধবার) থেকে কলেজে পাঠদান কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানিয়েছেন অধ্যক্ষ মোহাম্মদ জিয়াউল আলম।
তিনি বলেন, পরবর্তী তিন মাস শিক্ষার্থীদের মানসিক অবস্থার উন্নয়নে কাউন্সেলিং কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। ৬ তারিখ সকাল সাড়ে ৯টা থেকে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাস কার্যক্রম শুরু হবে। এরপর পরবর্তী অবস্থা বিবেচনায় বাকি ক্লাসগুলো চালুর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। অধ্যক্ষ আরো বলেন, ঘটনার ভয়াবহতা কাটিয়ে শিক্ষার্থীদের ধীরে ধীরে শিক্ষা কার্যক্রমে ফিরিয়ে আনতে আমরা ধাপে ধাপে কাজ করছি। এখনো আমরা নিয়মিত ক্লাস শুরুর অবস্থায় যাইনি। আগামীকাল (৪ আগস্ট) ক্লাস থাকলেও তা হবে কাউন্সেলিংভিত্তিক। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলবেন, তাদের মানসিক অবস্থা বোঝার চেষ্টা করবেন।
তিনি বলেন, কেউ যদি এখনও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকে বা আতঙ্কে থাকে, তাহলে আমরা তাকে ব্যক্তিগত কাউন্সেলিংয়ে নিয়ে যাব।
প্রসঙ্গত, গত ২১ জুলাই বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বিধ্বস্ত হয়। এ ঘটনায় ৩৩ শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিববকের মৃত্যু হয়েছে (শেষ খবর পর্যন্ত)। ভয়াবহ এ দুর্ঘটনার পর মাইলস্টোন কলেজ কর্তৃপক্ষ তিন দফায় ছুটি ঘোষণা করে। সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কলেজটি ২ আগস্ট পর্যন্ত বন্ধ ছিল।