বছর ঘুরতেই ফাটল ‘জুলাই ঐক্যে’, শঙ্কায় চব্বিশের অর্জন

মাত্র এক বছরের ব্যবধানে প্রশ্নের মুখে পড়ে গেছে সেই ‘জুলাই স্পিরিট’, যা এক সময় ছিল মুক্তির প্রতীক, ঐক্যের নিদর্শন। ২০২৪ সালের জুলাইয়ে ঘটে যাওয়া গণঅভ্যুত্থান, যা গোটা জাতিকে একত্র করেছিল, আজ তা পথ ও মতের দ্বন্দ্বে বিদীর্ণ।
ছাত্র, শ্রমিক, এবং সাধারণ মানুষের সম্মিলিত আন্দোলনে জন্ম হয়েছিল একটি নতুন আশার। লক্ষ ছিল স্বৈরতন্ত্রের অবসান ও একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের সূচনা। ১৬ বছরের শোষণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে যে ঐক্য গড়ে উঠেছিল, তা ভেঙে পড়েছে বছর ঘুরতেই।
অভ্যুত্থানের পর থেকেই শুরু হয় নেতৃত্বের মধ্যকার কৃতিত্বের লড়াই। অনেকে দলীয় ব্যানারে চলে যান, কেউ নতুন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলেন। শুরু হয় কাদা ছোড়াছুড়ি। এই দ্বন্দ্ব-সংঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেই বহুল আকাঙ্ক্ষিত ঐক্য।
তরুণ ছাত্রনেতাদের মধ্যকার বিরোধ যেমন প্রকাশ্যে এসেছে, তেমনি সিনিয়র রাজনীতিবিদদের মন্তব্যও জ্বালিয়ে দিয়েছে সেই আগুন। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় তরুণরাও হেনস্তা হয়েছেন, হারিয়েছেন সংযম।
এই প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন উঠছে—কতটা জীবিত আছে সেই ‘জুলাই স্পিরিট’?
মানবজমিন-এর প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, "যে স্পিরিট থেকে গণঅভ্যুত্থান হয়েছে, সেখানে আমরা দাঁড়িয়ে নেই। আমরা অনেক দূরে চলে গেছি। কারণ, মূল চেতনার সঙ্গে আমরা সম্মিলিতভাবে দূরে থেকেছি। আমরা বিশ্বাসঘাতকতা করেছি।"
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা অবশ্য একটু আশাবাদী। ইতিহাসের দিকে তাকিয়ে তারা বলছেন, বিপ্লব-পরবর্তী সময়ে কিছুটা বিশৃঙ্খলা স্বাভাবিক। আর বাংলাদেশে রাজনীতির প্রতিহিংসাপরায়ণ চর্চাও নতুন কিছু নয়।
উপস্থাপক ও বিশ্লেষক ডা. আব্দুন নূর তুষার বলেন, "যতদিন পর্যন্ত বাংলাদেশের মানুষ অধিকার আদায়ের সংগ্রাম করবে, ততদিন স্পিরিট বেঁচে থাকবে। বাঙালি জাতির প্রতিটি সংগ্রাম তার পরের সংগ্রামের মধ্যে বেঁচে আছে।"
সাংবাদিক আশরাফ কায়ছার বলেন, "আমরা অনেক কিছু চাই এবং আগামীকাল সকালের মধ্যে চাই—এভাবে তো হয় না। শাসনতন্ত্র ভারসাম্য নিয়ে সংলাপ হয়েছে। ধারাবাহিকভাবে হাঁটতে থাকলে একদিন দারুণ গণতান্ত্রিক পথে ফেরত যেতে পারবো।"
বিশ্লেষকদের মতে, শহীদদের আত্মত্যাগ ও গণমানুষের আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে ‘জুলাই স্পিরিট’কে বাঁচিয়ে রাখতেই হবে। গুম, খুন, দুর্নীতি ও রাষ্ট্রীয় অনাচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে হলে সেই চেতনা চর্চার বিকল্প নেই।