গুলি নয়, নতুন কৌশলে বাংলাদেশিদের হত্যা করছে বিএসএফ

সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলির ঘটনা কিছুটা কমলেও বাংলাদেশিদের হত্যার পদ্ধতিতে এসেছে ভয়ংকর পরিবর্তন। গুলি নয়, এখন বৈদ্যুতিক শক, দেশীয় অস্ত্রের আঘাত এবং অ্যাসিড দিয়ে পুড়িয়ে হত্যার পর পদ্মা নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হচ্ছে মরদেহ—এমনই অভিযোগ সীমান্তবাসীর।
গত ২০ জুলাই ভোরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের জহুরপুর সীমান্তে বিএসএফের হাতে আটক হন মোহাম্মদ লালচান (২৫)। স্থানীয়দের দাবি, তাকে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে হত্যার পর নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। পদ্মা নদী থেকে উদ্ধার করা হয় তার মরদেহ।
পরবর্তী সময়ে ১ আগস্ট রাজশাহীর গোদাগাড়ীর ফুলতলা ঘাট এলাকা এবং ২ আগস্ট মাসুদপুর সীমান্তে পাওয়া যায় আরও কয়েকটি মরদেহ, যেগুলোর প্রত্যেকটিতে রয়েছে নির্যাতনের স্পষ্ট চিহ্ন।
শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা ইউনিয়নের আজিজুর রহমান বলেন, "এখন আর গুলি করে হত্যা করছে না বিএসএফ। পরিবর্তে দেশীয় অস্ত্র বা অ্যাসিড দিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে মরদেহ নদীতে ফেলে দিচ্ছে।"
স্থানীয় বাসিন্দা রাকিবুল ইসলাম জানান, পদ্মার চরাঞ্চলের ২৫ কিলোমিটারজুড়ে এখন আতঙ্ক বিরাজ করছে। মাছ ধরতে গিয়ে বারবার বিএসএফের বর্বরতার শিকার হচ্ছেন সাধারণ জেলেরা।
নিহত সেলিম রেজার দুলাভাই আজিম উদ্দিন বলেন, "বৃহস্পতিবার নদীতে মাছ ধরতে গেলে বিএসএফ সেলিমসহ দুজনকে ধরে নিয়ে যায়। শনিবার পদ্মা নদীতে তাদের ক্ষত-বিক্ষত মরদেহ পাওয়া যায়।"
স্থানীয়দের অভিযোগ, গরু পাচারের নামে প্রলোভনে ফেলে বাংলাদেশিদের বিএসএফের হাতে তুলে দিচ্ছে কিছু ভারতীয় নাগরিক। ২০-৩০ হাজার টাকার লোভে নদী পার করে পাঠানো হয় অসহায় মানুষদের। এরপর তাদের হত্যা করা হয় নির্মমভাবে।
৫৩ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফাহাদ মাহদুম রিংকু বলেন, "মরদেহে আঘাতের চিহ্ন থাকলেও স্বজনদের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তাই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি।"
সীমান্তের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও। তাঁদের ভাষায়, আগের মতো গুলি করে হত্যা না করলেও বিএসএফ এখন আরও নিষ্ঠুর পন্থা অবলম্বন করছে, যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের জ্বলন্ত উদাহরণ।