সার্ভার হ্যাক রাজউকের

রাজউকের সার্ভার হ্যাক, নকশা অনুমোদন বন্ধ। অতীতে রাজউকের নকশা অনুমোদন ও ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র পেতে হাতে হাতে কাগজপত্র জমা দেওয়ার মাধ্যমে ফাইলগুলোর অনুমোদন হতো। এতে গ্রাহকের সঙ্গে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনের সুযোগে তারা আর্থিক লেনদেনে জড়িয়ে পড়তেন। এই সমস্যা নিরসনে অনলাইনে এসব কার্যক্রম সম্পন্নের জন্য রাজউক বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় রাজউকের আরবান রিজিলিয়েন্স প্রকল্পের আওতায় অনলাইনে এসব কার্যাবলি সম্পাদনের জন্য ইসিপিএস চালুর উদ্যোগ নেয়। যুক্তরাষ্ট্রের আরটিআই নামক একটি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে এই ইসিপিএস সার্ভার চালু করা হয়। এ জন্য ব্যয় হয় ৪৮ কোটি টাকা।
অনলাইনে বাড়ির নকশা অনুমোদনের জন্য ৪৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ইলেকট্রনিক কনস্ট্রাকশন পারমিটিং সিস্টেম (ইসিপিএস) চালু করেছিল রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। এটা করার মূল্য উদ্দেশ্য ছিল নকশা অনুমোদনে দুর্নীতি ও ভোগান্তি বন্ধের পাশাপাশি স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা। তিন বছর যেতে না যেতেই বন্ধ হয়ে গেছে রাজউকের ইসিপিএস কার্যক্রম। গত প্রায় দুই মাস ধরে নকশা অনুমোদন-সংক্রান্ত কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ। ফলে নকশা অনুমোদন ও ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র কার্যক্রম বন্ধ হয়ে পড়েছে। এখন আগের মতো ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে রাজউক ফিরে যাবে কিনা সেটা নিয়েও চিন্তাভাবনা চলছে। এতে প্রশ্ন উঠেছে, বিপুল অর্থ ব্যয়ে এই পদ্ধতি চালু নিয়ে।
২০২২ সালের দ্বিতীয়ার্ধে ইসিপিএসের মাধ্যমে অনলাইনে কার্যক্রম শুরু করে রাজউক। কিন্তু গত ১৯ মে একটি চক্র ওই সার্ভার হ্যাক করে অনুপ্রবেশের মাধ্যমে ১৫ তলা একটি ভবনের নকশা পাস করিয়ে নেয়। আরও তিনটি নকশা অনুমোদনের কার্যক্রম চলমান ছিল। বিষয়টি নজরে আসার পর রাজউক ইসিপিএস সার্ভারটি নিষ্ক্রিয় করে রাখে। ফলে সব প্রকার নকশা অনুমোদন ও ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্রের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। সার্ভার হ্যাকিংয়ের ঘটনায় মতিঝিলের নীলাভ নকশা নামক একটি কম্পিউটার দোকানের সম্পৃক্ততা পায় রাজউক। সংস্থাটির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট গত ২২ মে ওই কম্পিউটার দোকানে অভিযান চালিয়ে তিনজনকে আটক করেন। কিন্তু দোকানের মালিক এনামুলকে ধরতে পারেনি, যার ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ওই ভবনের নকশার ফি পরিশোধ করা হয়েছিল। এদিকে কয়েক মাস ধরে নকশা অনুমোদন ও ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র কার্যক্রম বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন গ্রাহকরা।
আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশনের (রিহ্যাব) জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি লিয়াকত আলী ভূঁইয়া বলেন, এই সমস্যার ফলে শুধু যে প্ল্যান পাস হচ্ছে না তা নয়, দৈনন্দিন অনেক কাজই কিন্তু এই সার্ভারের মাধ্যমে হয়ে থাকে। আমরা বারবার রাজউককে এ বিষয়টি বলছি। কিন্তু তার পরও কাজ হচ্ছে না।
গত ২০ জুলাই রাজউকের চেয়ারম্যান রিয়াজুল ইসলাম বলেন, শিগগিরই যদি আইসিটি বিভাগ সহযোগিতা দিয়ে আমাদের সমস্যা সমাধান করতে পারে, তাহলে হয়তো অনলাইন কার্যক্রম চালু করতে পারব। আর না হলে ম্যানুয়ালি চালু করব।
বিপুল অর্থ ব্যয়ে তৈরি সার্ভার অনিরাপদ কেন এ প্রসঙ্গে আরবান রিজিলিয়েন্স প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক রাজউকের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল লতিফ হেলালী বলেন, ৪৮ কোটি টাকা খরচ হলেও ওই টাকার ২০ শতাংশ গেছে ট্যাক্স ও ১৫ শতাংশ গেছে ভ্যাট বাবদ। বাকি ৩০ কোটি টাকায় মার্কিন প্রতিষ্ঠান আরটিআই এটা তৈরি করে দিয়েছে। বাংলাদেশে ইজিপি টেন্ডারের সার্ভারসহ বড় বড় সার্ভার তৈরির কাজ আরটিআই করেছে। তারা বিশ্বের নামি প্রতিষ্ঠান। আন্তর্জাতিক টেন্ডারের মাধ্যমে তারা কাজটি পেয়েছিল। কিন্তু সার্ভার হ্যাকের ঘটনায় রাজউকের আইসিটি বিভাগেরই কেউ হয়তো জড়িত থাকতে পারে। তা না হলে এটা হওয়ার কথা না।
অবশ্য এ প্রসঙ্গে রাজউকের সিস্টেম অ্যানালিস্ট মাহবুবুল হক বলেন, এ ধরনের কোনো সুযোগ আছে বলে মনে হয় না। তবে খুব শিগগিরই আবার ইসিপিএস চালু করা হবে। অ্যানালগ পদ্ধতিতে ফিরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাতে সমস্যা বাড়বে।