গণঅভ্যুত্থানের পর আইনশৃঙ্খলা শিথিল, বেপরোয়া হয়ে উঠেছে কিশোর গ্যাং

অগাস্ট মাসে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়েছে। এই শূন্যতার সুযোগে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে কিশোর গ্যাং চক্র।
পাড়া-মহল্লায় প্রকাশ্যে দেশীয় অস্ত্র হাতে মহড়া, প্রতিপক্ষকে মারধর, ছিনতাই কিংবা স্থানীয় চুরি-ডাকাতির ঘটনায় জড়িয়ে পড়ছে এসব অপরাধী কিশোররা। নিজেদের এলাকায় দখলদারিত্ব ও আধিপত্য প্রতিষ্ঠার প্রতিযোগিতায় গ্যাংগুলো একে অপরের বিরুদ্ধে সংঘাতে জড়াচ্ছে। এতে এলাকাভিত্তিক ভয়ংকর সংঘর্ষের আশঙ্কা বাড়ছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বর্তমানে বাহিনীর একটা অংশ রাজনৈতিক উত্তেজনা সামাল দিতে মোতায়েন রয়েছে। এর ফাঁকে গ্যাং অপরাধ বাড়ছে। আবার ধরলে বলা হয় অপ্রাপ্তবয়স্ক। ফলে অপরাধ ঠেকানো আর জবাবদিহি- দুটোই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পুলিশের দাবি, কয়েকটি কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা ইতোমধ্যেই ডাকাতি ও খুনের মতো অপরাধেও যুক্ত হয়েছে।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর, মিরপুর, জিগাতলা, উত্তরখান, ক্যান্টনমেন্ট ও উত্তরা- এসব এলাকায় গ্যাং সক্রিয় থাকার অভিযোগ মিলেছে। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, রাতে অলিগলিতে দেশীয় অস্ত্র হাতে মহড়া দেয় গ্যাং সদস্যরা। কেউ প্রতিবাদ করলে বা অন্য গ্যাংয়ের এলাকায় ঢুকলে সেখানেই চলে ‘শাস্তি’র নামে মারধর।
অপরাধ সমাজ বিশ্লেষক ড. সুমনা হক বলেন, শুধু আইন প্রয়োগে এই সমস্যার সমাধান হবে না। এই বয়সী কিশোররা চরম এক পরিচয় সংকটে ভোগে। তারা ‘নেতা’ হতে চায়, ভয় দেখাতে চায়, ভাই হতে চায়- আর সেটাই গ্যাংয়ে যুক্ত হওয়ার হাতছানি।
তিনি আরও বলেন, সমাধান হতে হবে চতুর্মুখী- সাংস্কৃতিক চর্চা, খেলাধুলা, পারিবারিক বন্ধন, কাউন্সেলিং, ডিজিটাল ডিটক্সিফিকেশন এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা- সব একসাথে প্রয়োজন।