গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় আরও অন্তত ৬১ জন নিহত

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় দুইজন ত্রান প্রার্থী সহ অন্তত ৬১ জন নিহত হয়েছেন। বুধবার (১৬ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
এর মধ্যেই ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য কাজ করা জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ সতর্ক করে বলেছে, অবরুদ্ধ গাজায় শিশুদের মধ্যে অপুষ্টির হার বেড়েই চলেছে। সংবাদমাধ্যমটি বলছে, মঙ্গলবার গাজার উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত শাতি শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ২৩ জন নিহত এবং আরও বহু মানুষ আহত হয়েছেন বলে আল জাজিরাকে স্থানীয় মেডিকেল সূত্রগুলো জানিয়েছে।
এর আগে ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, তাদের দলগুলো ভোর থেকে অন্তত ১৮ জন শহীদ ও ডজনখানেক আহতকে উদ্ধার করেছে, যাদের অধিকাংশই গাজার উত্তরাঞ্চলে ইসরায়েলি বিমান হামলায় হতাহত হয়েছেন। দিকে গাজার দক্ষিণাঞ্চলে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) পরিচালিত একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের কাছে অন্তত দুইজন নারী নিহত এবং ৩০ জন আহত হয়েছেন। জাতিসংঘ জানিয়েছে, গত মে মাসের শেষ দিকে জিএইচএফ-এর কার্যক্রম শুরুর পর থেকে গাজায় ত্রাণ পেতে গিয়ে অন্তত ৮৭৫ জন মারা গেছেন।
অন্যদিকে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী গাজার উত্তরাঞ্চলের ১৬টি এলাকার ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক স্থানান্তরের নির্দেশ জারি করেছে। এর মধ্যে জাবালিয়াও রয়েছে, যেখানে বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে পালাতে শুরু করেছেন।
আল জাজিরার মোয়াত আল-কাহলুত বলেন, “মানুষ তাদের গাড়ি ও গাধা ব্যবহার করে এলাকা ছাড়ছে এবং সবাই অজানা গন্তব্যের দিকে যাচ্ছে; তারা জানে না কোথায় যাবে।”
তিনি আরও জানান, “পরিবহনের জন্যও তাদের সংগ্রাম করতে হচ্ছে, কারণ এখান থেকে অন্য এলাকায় যাওয়ার মতো কোনো জ্বালানি নেই। তাই পরিস্থিতি অত্যন্ত বিশৃঙ্খল। এখানে বসবাসকারী সবাই আতঙ্কের মধ্যে আছেন।”সিভিল ডিফেন্স সংস্থা অনুযায়ী, গাজা শহরের বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের তাঁবুতে ইসরায়েলের হামলায় ছয়জন নিহত হয়েছেন।
এদিকে মঙ্গলবার আলাদাভাবে ইউএনআরডব্লিউএ-এর গাজার স্বাস্থ্য দলগুলো সতর্ক করে বলেছে, গত চার মাসেরও বেশি সময় ধরে ইসরায়েলি অবরোধ তীব্র হওয়ার পর থেকে অপুষ্টির হার বাড়ছে। ইউএনআরডব্লিউএ-এর প্রধান জেনারেল ফিলিপ লাজারিনি জানিয়েছেন, ২০২৪ সাল থেকে পরীক্ষা করা প্রতি ১০ জন শিশুর মধ্যে একজন অপুষ্টিতে ভুগছে। সংস্থাটি এক বিবৃতিতে গাজায় অপুষ্টিকে “ইঞ্জিনিয়ারড এবং মানবসৃষ্ট” বলে আখ্যায়িত করেছে।
এই সতর্কবার্তা এমন সময়ে এলো যখন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা গাজায় মানবিক পরিস্থিতির উন্নতি না হলে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করার জন্য ব্রাসেলসে বৈঠক করেছেন। মঙ্গলবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান কাজা কাল্লাস ১০টি সম্ভাব্য বিকল্প প্রস্তাব করেছেন, কারণ মানবাধিকারের ভিত্তিতে দুই পক্ষের মধ্যে একটি সহযোগিতা চুক্তি লঙ্ঘনের জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করা হয়েছে।
প্রস্তাবিত পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে পুরো চুক্তি স্থগিত করা, বাণিজ্য সম্পর্ক সীমিত করা, ইসরায়েলি মন্ত্রীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা, অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা জারি করা এবং ভিসামুক্ত ভ্রমণ বন্ধ করা। গাজায় চলমান ধ্বংসযজ্ঞ নিয়ে ক্রমবর্ধমান ক্ষোভ সত্ত্বেও, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কীভাবে পদক্ষেপ নেওয়া হবে সে বিষয়ে ইইউ দেশগুলো বিভক্ত ছিল এবং মঙ্গলবারের বৈঠকে কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে ঐকমত্য হয়নি।
কাল্লাস সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা এই বিকল্পগুলো টেবিলে রাখব এবং ইসরায়েল যদি তার প্রতিশ্রুতি পূরণ না করে তবে ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত থাকব”। তিনি আরও বলেন, “লক্ষ্য ইসরায়েলকে শাস্তি দেওয়া নয়, বরং গাজার পরিস্থিতি উন্নত করা।”