গাজায় আরও ৩৭ ফিলিস্তিনির মৃত্যু, অনাহারে নতুন করে প্রাণ গেল ৩ জনের

গাজায় প্রতিদিনই বড় হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। ইসরায়েলি আগ্রাসনে দৈনিক সে মিছিলে যোগ দিচ্ছে বহু ফিলিস্তিনি। সবশেষ পাওয়া খবর পর্যন্ত আজ বৃহস্পতিবার অবরুদ্ধ উপত্যকা গাজায় প্রাণ গেছে আরও ৩৭ ফিলিস্তিনির, যাদের মধ্যে ২২ জনই উপত্যকার সবচেয়ে বড় নগরী গাজা সিটির বাসিন্দা। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, নিহত ব্যক্তির তালিকায় রয়েছে চার ত্রাণপ্রত্যাশীও।
এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় অনাহারে মৃত্যু হয়েছে আরও তিন ফিলিস্তিনির। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এ নিয়ে অনাহার-অপুষ্টিজনিত কারণে গাজায় প্রাণহানি বেড়ে দাঁড়াল ৩৭০ জনে, যাদের ১৩১টিই শিশু।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, সম্প্রতি গাজা সিটিতে ইসরায়েলি হামলার মাত্রা কয়েক গুণ বেড়েছে। গতকাল বুধবার রাতভর সেখানে তাণ্ডব চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। আল-জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, আবাসিক বাড়িঘর ও বাস্তুচ্যুতদের তাঁবু লক্ষ্য করে চালানো হয়েছে হামলা। প্রতিনিয়তই ইসরায়েলি এমন বর্বরতায় স্বজন হারাচ্ছে নিরীহ গাজাবাসী। চেয়ে চেয়ে দেখা আর মেনে নেওয়া ছাড়া কিছুই করার নেই নিরীহ নিরস্ত্র গাজাবাসীর।
তেমনই এক হতভাগা তিন বছর বয়সী ইব্রাহিম। গতকাল ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় পরিবারের সবাইকে হারিয়েছে শিশুটি। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইব্রাহিম এখন সেই ৪৯ হাজার শিশুর একজন, যারা এ যুদ্ধে বাবা কিংবা মা অথবা দুজনকেই হারিয়েছে। ইব্রাহিমের দাদি আবু আল আবেদ আল-জাজিরাকে বলেন, ‘ইব্রাহিমের আহাজারিতে আমাদের ঘুম ভাঙে। দৌড়ে এসে দেখি সে ধ্বংসস্তূপের নিচে পড়ে আছে। জানি না কীভাবে বেঁচে গেল! আমার মেয়ের মরদেহ ছিন্নভিন্ন অবস্থায় পাই। তার আশপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল জামাতা আর নাতনির মরদেহ।’
জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের জরিপ অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর থেকে এ পর্যন্ত গাজায় অন্তত ১৭ হাজার শিশু অনাথ হয়েছে।
এদিকে গাজা সিটিতে ইসরায়েলি হামলার মাত্রা তীব্র হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চাপ বেড়েছে সেখানকার হাসপাতালগুলোতেও। কিন্তু এত বিপুলসংখ্যক মানুষের স্থান সংকুলান করা সম্ভব হচ্ছে না, বলছেন চিকিৎসকেরা। পাশাপাশি অবরোধ আর লাগাতার হামলার কারণে প্রয়োজনীয় সেবাদানের মতো সক্ষমতাও নেই হাসপাতালগুলোর।
আল-জাজিরার প্রতিবেদক জানিয়েছেন, রোগীকে বহন করে নিয়ে যাওয়ার মতো পর্যাপ্ত স্ট্রেচারও হাসপাতালগুলোতে নেই। বাধ্য হয়ে কাঁধে করে তাদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।