সিন্ধু চুক্তি স্থগিত, তারপরও পাকিস্তানকে তথ্য দিলো ভারত

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক উত্তেজনা তুঙ্গে। এর মধ্যেই নয়াদিল্লি রবিবার (২৪ আগস্ট) ইসলামাবাদকে তাওই নদীতে সম্ভাব্য বন্যা পরিস্থিতির বিষয়ে সতর্ক করেছে বলে জানা গেছে। সরকারি সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, সিন্ধু পানি চুক্তির নিয়মিত চ্যানেল স্থগিত থাকায় এ তথ্য ভারতের ইসলামাবাদ হাই কমিশনের মাধ্যমে পৌঁছে দেওয়া হয়। বিষয়টি সুসম্পর্কের ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন অনেকে। ভারতের সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি এ খবর জানিয়েছে।
এ ঘটনায় ভারত বা পাকিস্তান কারও পক্ষ থেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু নিশ্চিত করা হয়নি। তবে দাবি সত্য হলে, এটি হবে প্রথমবার যখন ভারত তার কূটনৈতিক মিশনের মাধ্যমে এ ধরনের তথ্য পাকিস্তানকে জানাল।
সাধারণত এ ধরনের তথ্য বিনিময় হয় সিন্ধু পানি কমিশনারদের মাধ্যমে, যা সিন্ধু পানি চুক্তির আওতায় হয়ে থাকে। তবে পহেলগাঁও সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে এ চুক্তি স্থগিত রয়েছে।
সূত্রের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত পাকিস্তানকে জম্মুর তাওই নদীতে সম্ভাব্য বড় বন্যার বিষয়ে সতর্ক করেছে। ইসলামাবাদে ভারতীয় হাই কমিশন রবিবার এ সতর্কবার্তা পৌঁছে দেয় বলে জানা গেছে। ভারতের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যেই সতর্কতা জারি করেছে।
তিব্বত থেকে উৎপন্ন হয়ে সিন্ধু নদ কাশ্মীর অতিক্রম করে পুরো পাকিস্তান জুড়ে প্রবাহিত হয়েছে। ১৯৬০ সালে বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় সম্পাদিত সিন্ধু পানি চুক্তি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে এ নদী ও এর উপনদীগুলোর পানি বণ্টন নিয়ন্ত্রণ করে আসছে।
চুক্তি অনুযায়ী, সিন্ধু নদ ব্যবস্থার মোট পানির ২০ শতাংশ ব্যবহারের অধিকার পেয়েছে ভারত, আর অবশিষ্ট ৮০ শতাংশ গেছে পাকিস্তানের ভাগে। পশ্চিমাঞ্চলীয় নদীগুলো (সিন্ধু, ঝেলম, চেনাব) বরাদ্দ হয়েছে পাকিস্তানের জন্য এবং পূর্বাঞ্চলীয় নদীগুলো (রাভি, বিয়াস, শতদ্রু) ভারতের জন্য। একই সঙ্গে এক দেশের জন্য বরাদ্দ নদীর সীমিত ব্যবহার অন্য দেশকেও করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁও সন্ত্রাসী হামলার একদিন পর ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একাধিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়। এর মধ্যে সিন্ধু পানি চুক্তি ‘স্থগিত’ রাখাও অন্তর্ভুক্ত ছিল। যদিও হামলার দায় বারবারই অস্বীকার করেছে পাকিস্তান।
চুক্তি স্থগিতের পর থেকে ভারত তিনটি নদীর পানিস্তরের তথ্য পাকিস্তানের সঙ্গে ভাগাভাগি করা বন্ধ করেছে। বর্ষাকালে ভারতের দেওয়া আগাম সতর্কবার্তাগুলো পাকিস্তানকে সময়মতো পাঞ্জাব ও সিন্ধ প্রদেশের নীচু এলাকায় বসবাসকারী মানুষদের সরিয়ে নিতে সাহায্য করত।
তবে মে মাসের সংক্ষিপ্ত সামরিক সংঘর্ষের পর দুই পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশীর সম্পর্কের আরও অবনতির হয়েছে। ফলে নয়াদিল্লির এমন পদক্ষেপকে সদিচ্ছার ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এদিকে পাকিস্তানে গত ২৬ জুন থেকে অব্যাহত মৌসুমি বৃষ্টিপাতে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ নেমে এসেছে। ভারী বর্ষণে সৃষ্ট বন্যায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৭৮৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে আরও এক হাজারের বেশি মানুষ।
অন্যদিকে সীমান্তের ওপারে ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের জল শক্তিমন্ত্রী জাভেদ আহমেদ রানাও কর্মকর্তাদের ইন্দুস অববাহিকার ঝেলম, রাভি ও তাওই নদীসহ সব প্রধান নদী ব্যবস্থার পানিস্তর সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামী ২৭ আগস্ট পর্যন্ত মাঝারি থেকে প্রবল বর্ষণ, আকস্মিক বন্যা ও পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের সম্ভাবনা রয়েছে।