শত সংকটেও অপরাধ দমনে ডিবির নিরলস প্রচেষ্টা

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)—যাকে রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ‘প্রাণভোমরা’ বলা হয়, সেই সংস্থা আজ জনবল সংকট, নেতৃত্বের অভাব, প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা ও প্রশিক্ষণের ঘাটতিতে একপ্রকার কোণঠাসা। ৫ আগস্ট ২০২৪ সালের পর থেকে নানা বিতর্ক ও অভ্যন্তরীণ পুনর্গঠনের মধ্য দিয়ে গেলেও গোয়েন্দা কার্যক্রমে কাঙ্ক্ষিত গতি ফেরেনি।
ডিবির প্রধান পদটি গত দুই মাস ধরে ফাঁকা পড়ে আছে। বর্তমানে একজন যুগ্ম পুলিশ কমিশনার অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে গোটা ইউনিট সামলাচ্ছেন। এছাড়া ১০টি বিভাগের মধ্যে ৬টিতে নেই নিয়মিত ডিসি, এডিসি কিংবা এসি। ডিবি-র গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট যেমন তেজগাঁও, গুলশান, রমনা, উত্তরা ও মিরপুর বিভাগেও একাধিক পদ ফাঁকা রয়েছে।
ডিবি মিরপুর বিভাগের ডিসি মো. মিজানুর রহমান বলেন, “জনবল কম হলেও আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। তবে দীর্ঘস্থায়ী সমাধানে নিয়োগ জরুরি।”
ডিবির একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ দমন। অনেক কর্মকর্তা এলআইসি (ল-ফুল ইন্টারসেপশন), এনটিএমসি (ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার) ও সাইবার নজরদারিতে দক্ষ নন। ফলে অপরাধ প্রতিরোধের চেয়ে অপরাধ সংঘটনের পর দমন করতেই বেশি সময় ব্যয় হচ্ছে।
ডিবি কর্মকর্তাদের বক্তব্য, প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ ও আধুনিক সরঞ্জামের অভাবে অনেক সময় অপরাধীর অবস্থান শনাক্ত কিংবা সংঘটিত অপরাধের আগাম বার্তা পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
ডিবিতে বর্তমানে কোনো নারী ক্যাডার কর্মকর্তা নেই। ফলে নারী ভিকটিম, বিশেষ করে সাইবার ক্রাইমে ক্ষতিগ্রস্ত নারীরা অভিযোগ জানাতে গিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। গুরুত্বপূর্ণ কোনো নারী আসামি গ্রেপ্তার হলে নারী পুলিশ অফিসার ‘ধার করে’ আনতে হয় ডিএমপি সদর দফতর থেকে।
সাম্প্রতিক সময়ে র্যাব পরিচয়ে উত্তরায় নগদের টাকা লুটের ঘটনায় দুর্ধর্ষ চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে ডিবি উত্তরা বিভাগ। তবে ঘটনার আগে কোনো গোয়েন্দা তথ্য ছিল না বলে স্বীকার করেছেন কর্মকর্তারা। এটিই প্রমাণ করে, ডিবির প্রিভেন্টিভ পুলিশিং দুর্বল হয়ে পড়েছে।
ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, “ডিবির ফাঁকা পদগুলো অচিরেই পূরণ করা হবে। তবে অতীতে ডিবিতে যেভাবে কাজ হতো, এখন আমরা তা থেকে বেরিয়ে আসছি। জনগণের আস্থা ফেরানোই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।”
ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অ্যাডমিন) ফারুক আহমেদ বলেন, “নতুন যেসব কর্মকর্তা নিয়োগ পেয়েছেন, তারা দীর্ঘদিন অবহেলিত ছিলেন। এখন তাদের দেশি-বিদেশি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আমাদের লক্ষ্য প্রযুক্তিনির্ভর, জনবান্ধব গোয়েন্দা ইউনিট গড়ে তোলা।”
ডিবির নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও একদল পুলিশ কর্মকর্তা তাদের দায়িত্বে অবিচল। তবে গোয়েন্দা ইউনিটের কার্যকারিতা ধরে রাখতে হলে প্রয়োজন কাঠামোগত সংস্কার ও দ্রুত জনবল পূরণ।