যুক্তরাষ্ট্রে নাগরিকত্ব প্রদান স্থগিত, অনিশ্চয়তায় অভিবাসীরা

বছরের পর বছর অপেক্ষার পর অবশেষে নাগরিকত্ব পাওয়ার দিনটিকে জীবনের সবচেয়ে বড় মুহূর্ত ভাবছিলেন অনেকে। সকালটা শুরু হয়েছিল আনন্দে, কিন্তু শেষ হলো হতাশায়। হঠাৎ ঘোষণা এলো—সরকারি শাটডাউনের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে নাগরিকত্ব প্রদান অনুষ্ঠান স্থগিত।
শনিবার (১১ অক্টোবর) ভার্জিনিয়ার এক ইমিগ্রেশন অফিসে সকাল থেকেই জড়ো হয়েছিলেন পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা বহু অভিবাসী। হাতে ছিল নাগরিকত্ব অনুষ্ঠানের নোটিশ, মুখে উচ্ছ্বাসের হাসি। শপথ পাঠ শেষে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হওয়ার স্বপ্নে তারা প্রস্তুত ছিলেন।
কিন্তু অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার আগেই আসে দুঃসংবাদ—“সরকারি শাটডাউনের কারণে অনুষ্ঠান বাতিল।”
অফিসের কর্মকর্তারা জানান, “আপনাদের আগেই জানানো উচিত ছিল।”
অনেকে বলেন, তারা কোনো ইমেইল বা ফোনকল পাননি। এমনকি নিরাপত্তা কর্মীরাও জানতেন না অনুষ্ঠান বাতিলের বিষয়টি। পরে ইউএস সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস (USCIS)–এর ওয়েবসাইটে দেখা যায়, অ্যাপয়েন্টমেন্টটি “অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির কারণে” বাতিল হয়েছে।
ওয়েবসাইটে শুধু লেখা ছিল—“এই অসুবিধার জন্য আমরা দুঃখিত।”
অফিসজুড়ে হতাশার ছায়া নেমে আসে। এক হিজাব পরিহিতা নারী নীরবে বলেন, “আমাকেও ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে… এটা কি আমার পোশাকের কারণে?” আরেকজন পুরো পরিবার নিয়ে এসেছিলেন শপথ অনুষ্ঠানে; ফিরে গেলেন উদ্বেগ আর অনিশ্চয়তা নিয়ে।
অনেকেই আতঙ্কিত, কারণ নাগরিকত্বে এই বিলম্ব তাদের কাজ, ভিসা, কিংবা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাকে প্রভাবিত করতে পারে। কেউ কেউ এক দশকেরও বেশি সময় ধরে গ্রিন কার্ডধারী ছিলেন—এখন শপথের ঠিক আগে এসে আটকে পড়েছেন অচলাবস্থায়।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নতুন তারিখ ১ নভেম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে চলমান ফেডারেল শাটডাউন অব্যাহত থাকলে তাও পিছিয়ে যেতে পারে।
ইউএসসিআইএস সাধারণত আবেদন ফি থেকেই পরিচালিত হয়, তাই আংশিকভাবে সংস্থাটি খোলা থাকলেও, নাগরিকত্ব সাক্ষাৎকার ও শপথ অনুষ্ঠানের মতো জনসেবা কার্যক্রমে বিলম্ব হচ্ছে।
সংস্থার পরিচালক জোসেফ এডলো এক্সে (সাবেক টুইটার) বলেছেন, “আমরা অসুবিধার জন্য দুঃখিত, কিন্তু আইন মেনে চলা আমাদের বাধ্যবাধকতা।”
কতগুলো নাগরিকত্ব অনুষ্ঠান বাতিল হয়েছে তা এখনও সরকারিভাবে জানানো হয়নি। তবে সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন অঞ্চলের অভিবাসীরা অনুষ্ঠান বাতিলের অভিজ্ঞতা শেয়ার করছেন।
১ অক্টোবর থেকে বাজেট নিয়ে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে অচলাবস্থার ফলে যুক্তরাষ্ট্র সরকার আংশিকভাবে বন্ধ রয়েছে। এর কারণে প্রায় ৭ লাখের বেশি ফেডারেল কর্মচারী বেতন ছাড়াই ঘরে বসে আছেন।
নয় মাস ধরে অভিবাসন নীতিতে ধারাবাহিক পরিবর্তনের সঙ্গে এই শাটডাউন মিলে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসীদের মধ্যে উদ্বেগ আরও বাড়িয়েছে।