যুদ্ধবিরতির নামে গাজাবাসীকে কেন দুর্ভিক্ষের মুখে ফেলছে ইসরায়েল?

যুদ্ধবিরতি চলছে কাগজে-কলমে, কিন্তু বাস্তবে গাজাবাসীর দুঃসহ জীবন যেন এক নীরব যুদ্ধ। মানবিক সহায়তা ঠেকিয়ে, সীমান্ত বন্ধ রেখে এবং খাবার-জ্বালানির সরবরাহ এর পথ বন্ধ করে দিয়ে ইসরায়েল যেন পুরো গাজা উপত্যকাকে ধীরে ধীরে ঠেলে দিচ্ছে এক ভয়ংকর দুর্ভিক্ষের দিকে।
মাত্র কয়েক দিন আগে, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল ও হামাস যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। কিন্তু যুদ্ধ থামার বদলে যেন রণক্ষেত্র বদলে গেছে—বোমার পরিবর্তে এবার গাজাবাসীর শত্রু হচ্ছে ক্ষুধা, পিপাসা ও চিকিৎসাহীনতা।
ইসরায়েল জাতিসংঘকে জানিয়েছে, এখন থেকে প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৩০০টি ট্রাক গাজায় প্রবেশ করতে পারবে। অথচ বাস্তবে গাজার প্রয়োজন কমপক্ষে ৬০০ ট্রাক সহায়তা—বলছে ইউনিসেফ, জাতিসংঘ, ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)।
এমন সংকুচিত সহায়তা প্রবাহে খাদ্য, জ্বালানি ও ওষুধ—সব কিছুরই ভয়াবহ সংকট দেখা দিচ্ছে গাজায়। হাসপাতালগুলোতে বিদ্যুৎ নেই, চিকিৎসার সরঞ্জাম নেই, এমনকি ব্যান্ডেজ, স্যালাইন, অক্সিজেন পর্যন্ত ফুরিয়ে যাচ্ছে।
ইসরায়েল পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে—রাফা সীমান্ত এখনই খোলা হবে না। এই সীমান্ত দিয়েই আগে গাজায় প্রবেশ করত জরুরি সহায়তা, জ্বালানি, এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম। এই রাস্তাও বন্ধ করে দিয়ে গাজাবাসীকে কার্যত ঘরে বসেই ধ্বংস হওয়ার পথে ঠেলে দিয়েছে ইসরায়েল।
এদিকে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা সত্ত্বেও, মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) গাজা সিটির শুজাইয়া এলাকায় ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছেন অন্তত ৯ জন ফিলিস্তিনি। এর মধ্যে ৫ জনকে সরাসরি গুলি করে হত্যা করা হয়—জানিয়েছে আল-আহলি আরব হাসপাতাল। তবে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর দাবি, তারা হুমকি প্রতিহত করতে গুলি চালিয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়ে ইসরায়েল এখন মানবিক সহায়তাকে অস্ত্র বানিয়ে ফেলেছে। মানুষ মরছে বোমায় নয়, বরং না খেয়ে, অসুস্থ হয়ে, ওষুধের অভাবে। এটাও এক ধরনের যুদ্ধ—যেখানে শত্রুকে নিঃশব্দে দুর্বল করা হয়।